আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র
অক্টোবরের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তাঁদের অভিযোগের সমর্থনে প্রচুর নথিপত্র সরকারের কাছে জমা দিয়েছিলেন আর জি কর-কাণ্ডের পরে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা। সূত্রের দাবি, এ নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী অনুসন্ধান কমিটি গঠনের ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে রাজ্য সরকার। একটি বৈঠকও হয়ে গিয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। শেষ পর্যন্ত নবান্ন এই পরিকল্পনা কার্যকর করলে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা গ্রেফতার হওয়া সন্দীপ ঘোষের কার্যকলাপ অনুসন্ধানের আওতায় আসবে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের বিরুদ্ধে জুনিয়র চিকিৎসকদের তোলা অভিযোগও খতিয়ে দেখতে পারে সেই অনুসন্ধান কমিটি। সরকারি ভাবে ঘোষণা এখনও না হলেও, প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, এক প্রকার মনস্থ করেই ফেলেছে সরকারের সর্বোচ্চ মহল।
প্রসঙ্গত, আর জি কর-কাণ্ডের পরে আর্থিক অনিয়ম-সহ একাধিক বিষয়ে তদন্ত করছে সিবিআই। তার পরেও নবান্নের এমন পরিকল্পনা কেন তা নিয়ে চর্চা রয়েছে প্রশাসনের অন্দরেই। এ নিয়ে সরকারি ভাবে নবান্ন থেকে কোনও বার্তা পাওয়া যায়নি। তবে প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রায় সব দাবিই সরকার মেনে নিয়েছে। এখন যে অভিযোগপত্রগুলি জমা পড়েছে সরকারের কাছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এই অন্তর্বর্তী কমিটি সেই নথিগুলি খতিয়ে দেখবে।’’ কারা সেই কমিটিতে থাকবেন, তা এখনও স্পষ্ট ভাবে জানা না গেলেও, সূত্রের দাবি, রাজ্য প্রশাসনের কয়েকজন সিনিয়র আধিকারিককে এই কমিটিতে রাখার ভাবনাচিন্তা রয়েছে। আর্থিক অনিয়মের দিকগুলি খতিয়ে দেখতে অর্থ দফতরকেও ওই কমিটিতে যুক্ত করার ভাবনা রয়েছে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের। প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, কয়েক দিন আগে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ একটি বৈঠক ডেকেছিলেন। সেই বৈঠকেই বলা হয়েছিল, অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে একটি অনুসন্ধান কমিটি তৈরি করতে চাইছে রাজ্য সরকার।
আধিকারিকদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত ২১ অক্টোবর নবান্ন সভাঘরে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার-সহ প্রশাসনিক কর্তারা। ছিলেন বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ এবং আধিকারিকেরাও। সেই বৈঠকে কার্যত অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের বাদানুবাদকে কেন্দ্র করে। কারণ, আন্দোলন পর্বে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ। কিন্তু যে ক’টি বৈঠক সরকার এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে আন্দোলন চলাকালীন হয়েছিল, তাতে কোনও বারই ওই দাবি মানতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী বা সরকারের শীর্ষকর্তারা। ২১ অক্টোবরের বৈঠকেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়।
অভিজ্ঞ আধিকারিকদের একাংশের দাবি, ওই দিন অভিযোগের নথির একটি গোছা মুখ্যসচিবের কাছে জমা দিয়েছিলেন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসা জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা। ফলে তা হাতে পেয়েও যদি সরকার কোনও কিছু অনুসন্ধান না করে, প্রশাসনিক ভাবে তা ভুল বার্তা বহন করবে। দ্বিতীয়ত, আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠনের পাল্টা একটি সংগঠন আচমকা জন্ম নিয়েছে। বিভিন্ন মহলের দাবি, তারা সরকার পক্ষ তথা শাসক দলের প্রভাবিত। ফলে আর জি কর-কাণ্ড বা চিকিৎসা ক্ষেত্রে ওঠা অভিযোগ নিয়ে আন্দোলন ফের দানা বাঁধলে প্রশাসনিক ভাবে পদক্ষেপগুলি গুছিয়ে রাখতে হবে সরকারকে। তৃতীয়ত, সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর নিয়ে একটি মামলাও চলছে। সেখানে সেই প্রসঙ্গ জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে তোলা হলে সরকারের পক্ষে মোকাবিলা করা কঠিন। সম্ভবত এই সব কারণেই অন্তর্বর্তী তদন্ত কমিটি গঠনের ভাবনাচিন্তা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সরকারের সর্বোচ্চ কর্তারা।