West Bengal News

বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্যকে ‘ক্ষমতাহীন’ করতে নয়া বিধি রাজ্যের, নবান্ন-রাজভবন সঙ্ঘাত আরও তীব্র

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:৪৪
Share:

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। —ফাইল চিত্র

নবান্ন-রাজভবন সংঘাত আরও জোরদার। এ বার ঘুরিয়ে রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করার উদ্যোগ নিল রাজ্য। রাজ্য সরকার পরিচালিত কলেজগুলিতে পদাধিকার বলে রাজ্যপালই আচার্য। সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আচার্যকে কার্যত ‘ক্ষমতাহীন’ করতে বিধানসভায় আইন পেশ করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জারি হয়েছে এই সংক্রান্ত গেজেট নোটিফিকেশনও। আচার্য পদের এক্তিয়ার বা ক্ষমতা কমানোর অর্থ রাজ্যপালের ক্ষমতাকেই কমিয়ে দেওয়া, এমনটাই মনে করছে রাজ্যের রাজনৈতিকমহল।

Advertisement

সংঘাত শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজোর কার্নিভাল ঘিরে। ওই অনুষ্ঠানে দীর্ঘ ক্ষণ তাঁকে বসিয়ে রাখায় উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তার পর সময় যত গড়িয়েছে, রাজ্যপালের সঙ্গে সরকারের সঙ্ঘাত বেড়েছে। রাজ্যপালের বিভিন্ন জেলা সফর থেকে শুরু করে বিধানসভায় গিয়ে কাউকে না পেয়ে ফিরে আসা ঘিরে সেই সংঘাতের পারদ উচ্চগ্রামে উঠেছে। ধনখড়-পার্থ তরজাও অব্যাহত রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সরাসরিই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। আজ মঙ্গলবার আবার তৃণমূল রীতিমতো রাস্তায় নেমে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই রাজ্য সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আচার্য তথা রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করে শিক্ষা দফতরের গুরুত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার।

নয়া বিধিতে যে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণে বা পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজ্যপালের ভূমিকা ছিল, তার সব ক্ষেত্রেই লাগাম পরিয়ে দিল রাজ্য সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন থেকে শুরু করে উপাচার্য নিয়োগ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও অভিযোগের তদন্ত— কোনও ক্ষেত্রেই রাজ্যপালের হাতে আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকল না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, ক্যাম্পাস থেকে কার্যত আচার্যের অস্তিত্বই মুছে ফেলার চেষ্টা হল। এক দিকে যেমন রাজ্য সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রাজ্যপাল তথা আচার্যের সরাসরি যোগাযোগের লাইন কেটে দেওয়ার ব্যবস্থা রাজ্য সরকার, তেমনই মাঝখানে তুলে দিল শিক্ষা দফতরের দেওয়াল।

Advertisement

২০১৭ সালের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ (পরিচালন ও নিয়ন্ত্রণ) আইনের ১৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী নয়া বিধি কার্যকর করছে রাজ্য। জারি হয়েছে গেজেট নোটিফিকেশন। সেই নোটিফিকেশনের তারিখ ৯ ডিসেম্বর সোমবার এবং ওই দিন থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা বলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিধানসভায় এই বিষয়টি পেশ করেন শিক্ষমমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

সাম্মানিক উপাধি

পুরনো প্রথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক উপাধি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি তালিকা রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হত। প্রয়োজনে সেই তালিকায় রদবদলের ক্ষমতা ছিল রাজ্যপাল তথা আচার্যের। কিন্তু নয়া বিধিতে রাজ্যপালের রদবদলের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র অনুমোদনের জন্য তাঁকে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়কে সরাসরি রাজভবনে না পাঠিয়ে সাম্মানিক প্রাপকদের সম্ভাব্য তালিকা পাঠাতে হবে শিক্ষা দফতরকে। শিক্ষা দফতর সেই তালিকা রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য পাঠাবে। কিন্তু রাজ্যপাল তাতে কোনও বদল করতে পারবেন না।

আরও পড়ুন: রাজ্যসভা-বিধানসভায় ধনখড়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে তৃণমূল, স্পিকারকে কড়া চিঠি রাজ্যপালের

সমাবর্তন

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আচার্য তথা রাজ্যপালের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। কৃতী পড়ুয়াদের সম্মান প্রদান থেকে সাম্মানিক উপাধির মেডেল প্রদান করেন আচার্যই। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোটা অনুষ্ঠান নিয়েই পরামর্শ ও মতামত দেন তিনি। কিন্তু এখন থেকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল কার্যত ‘অতিথি’র ভূমিকায় থাকবেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের কোনও কাজে রাজ্যপাল হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।

যোগাযোগ

নয়া নিয়মে রাজ্যপাল এখন আর সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারবেন না। সব ক্ষেত্রেই শিক্ষা দফতর মারফত যোগাযোগ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আচার্যের কোনও অভিযোগ থাকলে সেটাও সরাসরি তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারবেন না। জানাতে হবে শিক্ষা দফতরের মাধ্যমে। শিক্ষা দফতরই তদন্ত করে দেখবে এবং সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। আবার কোনও পরামর্শ থাকলে তা-ও জানাতে হবে শিক্ষা দফতরের মাধ্যমেই।

উপাচার্য নিয়োগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রেও রাজ্যপালের হাত ‘বেঁধে’ দেওয়া হচ্ছে। আগেকার নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্চ কমিটি তিন জনের নাম সুপারিশ করে রাজভবনে পাঠাত। আচার্য তার মধ্যে থেকে যে কোনও এক জনকে বেছে নিতেন। কিন্তু এখন থেকে তালিকায় প্রথম যে নামটি থাকবে, তাতেই সিলমোহর দিতে হবে আচার্যকে। অর্থাৎ যে কোনও এক জনকে বাছাই করার ক্ষমতা আর থাকছে না রাজ্যপালের।

আরও পড়ুন: শৈশব চুরি রুখতে হরিয়ানায় বন্ধ হচ্ছে সব কেজি স্কুল, কী বলছে এ রাজ্যের শিক্ষামহল

পরিচালন

বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজভবনের ছায়া সরাতে পরিচালন সমিতির সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রেও রাজ্যপালের ক্ষমতা সীমীত হচ্ছে। আগে পরিচালন সমিতিতে এক জন রাজ্যপাল তথা আচার্যের প্রতিনিধি থাকতেন। তাঁর নাম ঠিক করতেন রাজ্যপালই। কিন্তু এখন রাজ্য শিক্ষা দফতর তিনটি নাম পাঠাবে। তার মধ্যে থেকে এক জনকে বেছে নিতে হবে রাজ্যপালকে।

বৈঠক

বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট বা কোনও ধরনের বৈঠক ডাকার ক্ষেত্রে এত দিন নিয়ম ছিল, উপাচার্যের তরফে আচার্য তথা রাজ্যপালকে বৈঠকের দিন জানানো হবে, তার পর রাজ্যপাল বৈঠক ডাকবেন। কিন্তু নতুন নিয়মে বৈঠক ডাকার ক্ষেত্রে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে তা ডাকা যাবে। রাজভবনকে শুধুমাত্র দিন ক্ষণ জানিয়ে রাখলেই হবে।

ফলে সব মিলিয়ে রাজ্য সরকার পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে আচার্যের আর তেমন কোনও ভূমিকাই থাকছে না বলেই মনে করছে রাজ্যের শিক্ষামহল। সেই জায়গায় নীতি নির্ধারকের ভূমিকায় চলে আসছে শিক্ষা দফতর। পরোক্ষে রাজ্য সরকারের কর্তৃত্বই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আরও জেঁকে বসছে বলেই মত ওই মহলের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement