বাঘরোল।
তকমা আছে। কিন্তু কপালে সুখ নেই বাঘরোলের! প্রায়শই মাঠেঘাটে মানুষের ঠ্যাঙানি খেয়ে মরতে হয় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য প্রাণীর তকমাধারী এই বেড়ালকে। সংরক্ষণ তো দূর অস্ত, বঙ্গে রাজ্য প্রাণীর সংখ্যা কত, সেই সমীক্ষাও হয়নি। তবে এ বার সেই কাজ শুরু হতে চলেছে বলে খবর। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায় জানিয়েছেন, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-র সঙ্গে মিলে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বাঘরোলের সমীক্ষা, সংরক্ষণ-সহ একাধিক কাজ শুরু করতে চলেছে রাজ্য।
প্রধান মুখ্য বনপাল বলেন, ‘‘এই প্রকল্পে চিড়িয়াখানার বাঘরোলের মধ্যে প্রজনন ঘটিয়ে বাচ্চা ছাড়া হবে জঙ্গলে। জঙ্গলে বাসস্থানও তৈরি করা হবে।” বাঘরোল বা মেছো বেড়ালের উপরে গবেষণা করছে রাজ্য জীববৈচিত্র পর্ষদও। তাদের চেয়ারম্যান হিমাদ্রিশেখর দেবনাথ বলেন, ‘‘মেছো বেড়ালের স্বভাব, বাসস্থান ইত্যাদি নিয়ে পর্ষদ গবেষণা করছে। বন দফতর চাইলে সেই সব তথ্য বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হবে।” প্রসঙ্গত, বঙ্গের রাজ্য প্রাণী হলেও বাঘরোল সংরক্ষণে এগিয়ে ওড়িশা। চিল্কা হ্রদ এলাকায় বাঘরোল সংরক্ষণ প্রকল্পের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত এ রাজ্যের গবেষক তিয়াসা আঢ্য। বাঘরোল নিয়ে কাজ করে তিয়াসা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছেন।
বাঘরোলের ঠিকুজি
• নাম: বাঘরোল, মেছো বেড়াল
• বিজ্ঞানসম্মত নাম: প্রিয়োনেইলুরাস ভিভেরিনাস
• বাস: দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নদী, হ্রদ, জলাশয়ের কাছে। এ রাজ্যে মূলত দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর
• খাদ্য: মূলত মাছ। তা ছাড়া, হাঁস, মুরগি, ছোট প্রাণী ইত্যাদি
• সংরক্ষণের মর্যাদা: আইইউসিএন লাল তালিকায় ‘ভালনারেবল’
বাঘরোলের আরেক নাম মেছো বেড়াল। নামেই ইঙ্গিত, মূলত মাছই খাদ্য। তবে হাঁস, মুরগিও সাবাড় করে এরা। সেই কারণেই মানুষের সঙ্গে সংঘাত বাধে। সাধারণ বেড়ালের থেকে বড় চেহারা, রং দেখে এদের হিংস্র প্রাণী মনে করেন অনেকে। সম্প্রতি হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় বাঘের আতঙ্ক ছড়ায়। হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সদস্য এবং বনকর্মীরা গিয়ে ‘বাঘটিকে’ উদ্ধার করেন। দেখা যায় , এ তো বাঘের মাসি বাঘরোল! প্রাণী-বিশেষজ্ঞেরা জানান, নেহাতই নিরীহ এরা।
হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সম্পাদক সম্রাট মণ্ডল বলছেন, ‘‘বাঘরোল দেখতেও অনেকটা বাঘের মতো। তাই মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।” তাঁর অভিযোগ, ব্যবসার ক্ষতির আশঙ্কায় মাছচাষিদের একাংশ বাঘরোলকে মেরে ফেলে। এ ছাড়া, ফলহারিণী কালীপুজো বা বুদ্ধপূর্ণিমায় শিকার উৎসবে বাঘরোল মারা পড়ছে।
বন দফতরের দাবি, বাঘরোল মারা হলে আইনি পদক্ষেপ করা হয়। যাতে সকলের কাছে কড়া বার্তা যায়।