100 days work

পঞ্চায়েতমন্ত্রী কি দিল্লি-দরবারে, একশো দিনের বিকল্প কাজে জোর নবান্নের

সরকারি তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজ্যে ৪২টি দফতরের ৬৫ হাজার কাজে প্রায় ২৯ লক্ষ শ্রমিককে নিযুক্ত করা গিয়েছে। কর্মদিবস তৈরি হয়েছে প্রায় ৫.৭ কোটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২২ ০৬:১০
Share:

একশো দিনের কাজ প্রকল্পে টাকা দিতে শুরু করেনি কেন্দ্র। ফাইল চিত্র।

এক দিকে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে আটকে থাকা টাকা পেতে রাজ্যের মন্ত্রীর দিল্লিতে দরবারের সম্ভাবনা, অন্য দিকে বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের সরকার ও বিরোধী শিবিরের চাপান-উতোর। এই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সব জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করে একশো দিনের বিকল্প কাজের কর্মসূচিতে বাড়তি জোর দিয়েছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দ্বিবেদী জানান, দফতরগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে এই কাজ করতে হবে। বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই বিষয়টির উপরে জোর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

Advertisement

চলতি আর্থিক বছর (২০২২-২৩) শেষ হতে বাকি চার মাস। তার উপরে বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত ভোট। এক বছর হতে চলল, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে টাকা দিতে শুরু করেনি কেন্দ্র। ফলে ওই প্রকল্পের জবকার্ডধারীদের বিকল্প কাজের জোগান ঠিক রাখতে কার্যত রাজ্য সরকার মরিয়া। আর্থিক টানাটানি সত্ত্বেও ইতিমধ্যেই সেই কর্মসূচিতে প্রায় ১২২৩ কোটি টাকা খরচ করেছে নবান্ন। এই অবস্থায় আগামী সপ্তাহে একশো দিনের কাজ নিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের বৈঠকের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। সেই বৈঠক ফলপ্রসূ হলে পরিস্থিতির বদল ঘটতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের অনুমান।

তামিলনাড়ু সফরে সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের সঙ্গে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকেও একশো দিনের কাজে বরাদ্দ আটকে রাখার প্রসঙ্গটি উঠেছিল। দুই বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা এ বিষয়ে মত বিনিময় করেন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য, যারা বঞ্চিত হচ্ছে। এই ধরনের বঞ্চনার বিরুদ্ধেও বিরোধীদের সরব হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মমতা। এ দিনে জেলাশাসকদের সঙ্গে মুখ্যসচিবের বৈঠকের প্রেক্ষিতে প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, বিশেষ করে পূর্ত দফতরের কাজে দক্ষ শ্রমিকদের বেশি দরকার হয়। ফলে একশো দিনের কাজে অদক্ষ শ্রমিকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, সমন্বয়ের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে। সরকারি তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজ্যে ৪২টি দফতরের ৬৫ হাজার কাজে প্রায় ২৯ লক্ষ শ্রমিককে নিযুক্ত করা গিয়েছে। কর্মদিবস তৈরি হয়েছে প্রায় ৫.৭ কোটি। শ্রমিকদের মজুরি বাবদ রাজ্য খরচ করেছে প্রায় ১২২৩ কোটি টাকা। তাতে মাথাপিছু গড়ে ২১৩ টাকা মজুরি দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে দফতরের সচিব পি উলাগানাথনকে নিয়েই দিল্লি যাওয়ার কথা পঞ্চায়েতমন্ত্রীর। সেখানে সচিব স্তরেও আলোচনার সম্ভাবনা আছে। একশো দিনের কাজ প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের বক্তব্য এবং রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে এই ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ করেছে, তার সবিস্তার বিবরণ তুলে ধরতে পারেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী।

বালুরঘাটে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রাজ্যের নীতির সমালোচনা করে বলেন, “কেন্দ্রীয় অনেক প্রকল্পের টাকাই নিজেদের বলে চালায় রাজ্য। মানুষকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে কিছু বলছি না। কিন্তু এটা ত্রাণ দেওয়ার মতো। ত্রাণ দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়। পরিত্রাণ দরকার। কিন্তু সেই উন্নয়ন রাজ্যে দেখা যাচ্ছে না। কেবল তৃণমূল নেতাদের আর্থিক উন্নয়ন ছাড়া।” রাজ্যের পুরমন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিমের কটাক্ষ, এ রাজ্যের উন্নয়ন দেখতে না-পেলে মস্তিষ্কে সমস্যা রয়েছে বা চোখের। ‘‘কেন্দ্র আমাদের ভিক্ষা দেয় না। রাজ্য থেকে যে-টাকা নিয়ে যায়, তার একটা অংশ দেওয়া হয়। যোজনা কমিশন তুলে দিয়ে নীতি আয়োগ হয়েছে। সেখানে আলোচনার জায়গা নেই। বাংলার মানুষকে ভিক্ষা দিচ্ছে মনে করছে। বাংলার মানুষকে টাইট করার জন্য টাকা আটকাচ্ছে। আমরা প্রকল্পের নামে বাংলার নাম দিই। আপনাদের প্রকল্পের একটা অংশ দেন, বাকি টাকা দেয় রাজ্য। মাছের তেলে মাছ ভাজছেন,” বলেন ফিরহাদ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement