Ration Card

অর্থাভাব! প্রায় দেড় কোটি ডিজিটাল রেশন কার্ড আপাতত ‘নিষ্ক্রিয়’ করে রাখতে কড়া পদক্ষেপ রাজ্যের

আর্থিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানাচ্ছেন, গত আর্থিক বছরের (২০২১-২২) তুলনায় চলতি অর্থবর্ষে (২০২২-২৩) খাদ্য দফতরের বাজেট বরাদ্দ কমেছে প্রায় ৩২৩৬ কোটি টাকা।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:০৭
Share:

বৈধ উপভোক্তাদেরই গুরুত্ব দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। প্রতীকী ছবি।

বাতিল করা হচ্ছে না। কিন্তু পরিস্থিতির তাগিদে প্রায় দেড় কোটি ডিজিটাল রেশন কার্ডকে আপাতত ‘নিষ্ক্রিয়’ করে রাখার মতো কড়া পদক্ষেপ করতে হল রাজ্য সরকারকে। কারণ একটাই। অর্থাভাব। এই অবস্থায় ওই সংখ্যক ডিজিটাল রেশন কার্ডকে সাময়িক ভাবে অকেজো করে দিলে দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন আধিকারিকদের একাংশ।

Advertisement

আর্থিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানাচ্ছেন, গত আর্থিক বছরের (২০২১-২২) তুলনায় চলতি অর্থবর্ষে (২০২২-২৩) খাদ্য দফতরের বাজেট বরাদ্দ কমেছে প্রায় ৩২৩৬ কোটি টাকা। ফলে নিখরচার রেশন এবং দুয়ারে রেশন ব্যবস্থা কার্যকর রাখতে এখন শুধু বৈধ উপভোক্তাদেরই গুরুত্ব দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আগে রাজ্যে প্রায় ১০ কোটি ৬০ লক্ষ ডিজিটাল রেশন কার্ড ছিল। আধার-বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে ‘বৈধ’ রেশন কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ন’‌কোটি ১২ লক্ষ। অর্থাৎ প্রায় এক কোটি ৪৮ লক্ষ ডিজিটাল রেশন কার্ডকে আপাতত ‘নিষ্ক্রিয়’ করে রাখা হয়েছে। সেগুলি বাতিল হচ্ছে না। যদি কোনও ‘উপভোক্তা’ তাঁর বৈধ অস্তিত্বের উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট রেশন কার্ডটি আবার সক্রিয় করে দেওয়া হবে। তখন গণবণ্টন ব্যবস্থার সুযোগও পাবেন তিনি। “উপভোক্তা অনলাইন বা অফলাইনে প্রমাণ-সহ নিজের অস্তিত্ব এবং বৈধতা দাবি করলেই কার্ড ফের সক্রিয় হয়ে যাবে,” বলেন এক কর্তা।

Advertisement

অনেক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকের বক্তব্য, কোষাগারের বর্তমান অবস্থায় রাজ্য সরকার অতি জরুরি প্রকল্পের জন্য অর্থ সংগ্রহে ব্যস্ত। কেন্দ্রের কাছে প্রচুর টাকা বকেয়া রয়েছে বলে অনেক দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে রাজ্য। কয়েকটি প্রকল্পে আবার কেন্দ্রের টাকা আটকেও রয়েছে। এই অবস্থায় কোথা থেকে কত টাকা বাঁচানো যায়, তার পরিকল্পনা চলছে প্রশাসনের শীর্ষ মহলে। এর মধ্যে ‘ভুয়ো’ রেশন কার্ড আটকানো গেলে বিপুল অর্থ বাঁচানো সম্ভব। তাই সেই ব্যবস্থাই হচ্ছে।

প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য, রেশন ব্যবস্থায় এক কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য দিতে কমবেশি ২৮ টাকা ভর্তুকি লাগে। গত আর্থিক বছরে (২০২১-২২) ‘খাদ্যসাথী’ ও ‘দুয়ারে রেশন’ কর্মসূচি মিলিয়ে যে খরচ হয়েছে, তা বরাদ্দের থেকে প্রায় ২৯০০ কোটি টাকা বেশি। এ বছর বাড়তি খরচ ঠেকানোই অন্যতম লক্ষ্য। বর্তমান ব্যবস্থায় ১.৪৮ কোটি রেশন কার্ড ‘নিষ্ক্রিয়’ করে ন্যূনতম দু’হাজার কোটি টাকা বাঁচানো গেলে সরকার অতিরিক্ত খরচের বোঝা অনেকটাই কমাতে পারবে। আবার গত আর্থিক বছরের তুলনায় এ বছর খাদ্য দফতরের বরাদ্দ কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। গত বছর তাদের বাজেট বরাদ্দ ছিল ১২,২৯৩.১৭ কোটি টাকা। এ বছরের বাজেটে তাদের জন্য ৯০৫৬.৭৭ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই নিখরচার রেশন এবং দুয়ারে রেশন প্রকল্প চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থ বাঁচানো খাদ্য দফতরের কাছে খুব জরুরি। রাজ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেশন চালু হয়েছে অনেক দিন আগেই। তার জন্য সব ডিজিটাল রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ড যুক্ত করতে হচ্ছে। সেই সঙ্গেই যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে উপভোক্তার মোবাইল ফোনের নম্বরও। তাতে সুরক্ষিত থাকছে উপভোক্তাদের অধিকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement