প্রতীকী ছবি।
তেহট্টের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক প্রায় দশ বছরের। সেখানে তৈরি হয়েছে তাঁর নিজস্ব পরিমণ্ডল। নিজের পুরনো দল তৃণমূল থেকে বিধানসভা ভোটে টিকিট না-পেয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন সেই গৌরীশঙ্কর দত্ত। এবং তার পর থেকেই তেহট্টে বিজেপির অন্দরে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একাংশ তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেছে, আবার একাংশ তাঁর এই বিজেপি-যোগ মেনে নিতে পারছেন না।
২০১১ সালে এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে লড়াই করে পরাজিত হন গৌরীবাবু। কিন্তু ২০১৬ সালে তিনি তৃণমূলের টিকিটেই এখানে জয়ী হন। কৃষ্ণনগরে বাড়ি হলেও গত দশ বছর তেহট্টে তাঁর নিয়মিত যাতায়াত ছিল। বিজেপির একাংশের দাবি, এত দিন যাঁর দাপটে তাঁদের ভয়ে থাকতে হয়েছে, হেনস্থা হতে হয়েছে, যিনি এত দিন সর্বশক্তি দিয়ে বিজেপিকে রুখতে চেয়েছেন তিনি আজ ঠ্যালায় পড়ে তাঁদের সহযোদ্ধা হওয়ার চেষ্টা করছেন। বিজেপির অনেকেই গৌরীশঙ্করবাবুর এই ‘বদল’ মানতে পারছেন না এবং তাঁকে ‘সুবিধাবাদী’ আখ্যা দিচ্ছেন।
তেহট্টেরই এক বিজেপি নেতা যেমন বলছেন, “শুক্রবার পর্যন্ত জানতাম যে, তেহট্টে গৌরীশঙ্করবাবু আমাদের সব চেয়ে বড় শত্রু। আজ রাতারাতি তিনি আমাদের পরম মিত্র হয়ে গেলেন! সেটা মানি কি করে?”
কিন্তু দল এটাই চাইছে। বিজেপির সর্বোচ্চ নেতৃত্বের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন গৌরীশঙ্করবাবু। গৌরীশঙ্করবাবুর মতো নেতা তৃণমূল থেকে তাঁদের দলে যোগ দেওয়ায় দলের শক্তিবৃদ্ধি হবে বলে মনে করছেন বিজেপির অনেক নেতা। বিশেষ করে এই নির্বাচনের সময় তাঁর যোগদান বিজেপির পক্ষে বিশেষ লাভজনক হয়ে উঠতে চলেছে বলে মনে করছেন কেউ-কেউ।
তেহট্ট জেলা পরিষদ ৯ মণ্ডল যুব মোর্চার সভাপতি ধনঞ্জয় ঘোষ যেমন বলেন, “ভাল নেতাকে দলে পেয়েছি। এই বিধানসভা এলাকায় তাঁর নিজস্ব ‘পকেট ভোট’ বিজেপি পাবে। ভাল ফল করবে বিজেপি।” তেহট্টের বাসিন্দা নদিয়া জেলা উত্তর কিসান মোর্চার সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ দেবনাথের কথায়, “ক্ষোভ-বিক্ষোভের তো কিছু নেই। দলে এসেছেন বর্ষিয়ান নেতা। দলের উত্থান এতে সহজ হবে।”
কিন্তু বিজেপির সকলেই এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্লক নেতার কথায়, “এমনিতেই তেহট্টে দলের ভিতরে হাজারটা গোষ্ঠী। গৌরীবাবু আসা মানে গোষ্ঠীর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। কারণ, তেহট্টে তিনি নিজের মতো করে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। তাতে সমস্যা বাড়তে পারে।” তা ছাড়া, গোরীবাবু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর বিজেপির স্থানীয় অনেক নেতার অস্তিত্ব সঙ্কট হয়েছে বলেও একাংশের দাবি।
তবে সমস্যার কথা উড়িয়ে বিজেপি উত্তর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক অর্জুন বিশ্বাস বলেন, “এটা দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে সিদ্ধান্তের বিষয়। গৌরীবাবু কী ভাবে কাজ করবেন, কোন দায়িত্ব পালন করবেন, তা রাজ্য নেতৃত্ব বুঝবে।”