গ্যাস কাণ্ডে মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ বহাল

খড়্গপুর থেকে মোবাইলে দুর্ঘটনার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন ব্যবসায়ী সন্দীপ সিংহ। তিনি জানান, খড়্গপুরের গোলবাজার এলাকার উষা গ্যাস এজেন্সি থেকে রান্নার সিলিন্ডার আসত তাঁদের বাড়িতে।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

রান্নার গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার পাঠানো মিস্ত্রির অদক্ষতার জন্যই পুড়ে মারা গিয়েছেন মামলাকারীর বাবা-মা-ভাই। অতএব অদক্ষ মিস্ত্রিকে গুরুত্বপূর্ণ কাজে পাঠানোর দায় ওই সংস্থা অস্বীকার করতে পারে না। এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, মামলাকারীর ক্ষতিপূরণ বাবদ গ্যাস সরবরাহকারী এবং তার বিমা সংস্থাকে ১৭ লক্ষ টাকা দিতে হবে। বছর দুই আগের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যায় গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা। রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সম্প্রতি জেলা আদালতের রায়ই বহাল রেখেছে।

Advertisement

খড়্গপুর থেকে মোবাইলে দুর্ঘটনার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন ব্যবসায়ী সন্দীপ সিংহ। তিনি জানান, খড়্গপুরের গোলবাজার এলাকার উষা গ্যাস এজেন্সি থেকে রান্নার সিলিন্ডার আসত তাঁদের বাড়িতে। অনেক চেষ্টা করেও গ্যাস না-জ্বলায় সরবরাহকারী সংস্থার কাছে ফোনে অভিযোগ জানানো হয়। ২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর সকালে বাড়িতে মিস্ত্রি পাঠায় ওই সংস্থা।

সন্দীপবাবুর আইনজীবী আশীর্বাদ হালদার বলেন, ‘‘দেবাশিস মজুমদার নামে এক মিস্ত্রি আমার মক্কেলের বাড়ি যান। ওভেনের সঙ্গে সিলিন্ডার জুড়েও গ্যাস না-জ্বলায় তিনি সিলিন্ডারের উপর থেকে ভাল্‌ভে চাপ দেন। সেই সময় অনেকটা গ্যাস বেরিয়ে যায়। তার পরেই সিলিন্ডারের সঙ্গে রেগুলেটর জুড়ে দেন দেবাশিস।’’ সেই অবস্থায় ওভেন জ্বালাতেই ঘরে জমাট গ্যাসে আগুন ধরে যায়। ওই ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হন সিংহ পরিবারের চার জন এবং দেবাশিস। পরে হাসপাতালে মারা যান সন্দীপবাবুর মা-বাবা-ভাই। মৃত্যু হয় দেবাশিসেরও। সন্দীপবাবুর কিশোর পুত্রও ভীষণ ভাবে দগ্ধ হয়েছিল। দীর্ঘ চার মাসের চিকিৎসার পরে আপাতত সে কিছুটা সুস্থ। ‘‘সংস্থার পাঠানো মিস্ত্রির অদক্ষতার জন্যই পরিবার হারিয়েছি। ওই গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা কোনও ভাবেই দক্ষ মিস্ত্রি না-পাঠানোর দায় এড়াতে পারে না,’’ বললেন সন্দীপ।

Advertisement

ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে ২০১৫ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন সন্দীপ। মিস্ত্রির অদক্ষতার জন্য ভর্ৎসনা করে আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘তদন্তে দেখা গিয়েছে, দেবাশিস মজুমদার ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশন (আইওসি) থেকে মাত্র দু’দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। মিস্ত্রি হিসেবে ওই প্রশিক্ষণ যথেষ্ট নয়। অদক্ষ মিস্ত্রিকে এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োগ করার দায় গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা এড়াতে পারে না।’’ আদালত গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা এবং তাদের বিমা সংস্থাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সম্প্রতি রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সেই রায় বহাল রেখেছে। গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার তরফে গোবিন্দ পাল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আদালতের রায় মানতে বাধ্য। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement