সোমবার চার শিশুর মৃত্যু হয় চোপড়ায়। — ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালি নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে চোপড়ায় চার শিশুর মৃত্যু নিয়ে সরব তৃণমূল। রাজ্যপাল সন্দেশখালি যাওয়ার পরে চোপড়া নিয়ে রাজভবনের পদক্ষেপের দাবিতে চাপ তৈরি করেছে। মঙ্গলবারই সন্দেশখালি গিয়েছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। আর সেই সময়েই পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন চোপড়া যাওয়ার ঘোষণা করে দিল। বুধবারেই কমিশনের পাঁচ প্রতিনিধি যাবেন উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায়।
প্রসঙ্গত, চোপড়ার চেতনাগাছে বিএসএফ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় গত সোমবার মাটি চাপা পড়ে চার শিশুর মৃত্যু হয়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দাসপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চেতনাগাছ এলাকায় বিএসএফ একটি নর্দমা কাটছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। সেখানেই খেলা করছিল শিশুরা। আচমকাই ধস নেমে দুর্ঘটনা ঘটে। মাটির নীচে চাপা পড়ে চার শিশু। বিএসএফ জওয়ানেরা তাঁদের উদ্ধার করে চোপড়ার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। সেখানেই চার শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। এ নিয়ে বিএসএফের গাফিলতির অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নেমে পড়েছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার রাজভবনে যাবেন দলের প্রতিনিধিরা।
শিশু কমিশনও রাজভবনের পদক্ষেপের দাবি তুলেছে। মঙ্গলবার কমিশনের প্রধান তুলিকা দাস সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুর্ভগ্যজনক ও ক্ষমার অযোগ্য ঘটনা। আমি বুধবার চোপড়া যাব। কমিশনের মোট পাঁচ জনের দল যাবে। কী কারণে এমন হল তা সরেজমিনে দেখব। এমন ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।’’
কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘খননকার্যের জন্য পুলিশ বা জেলাশাসকের কাছে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিএসএফ নিয়ন্ত্রিত এলাকা। তাই অনুমতি না নিয়েই কাজ করছিল। যদি প্রশাসনের কাছে কোনও খবর থাকত তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হত।’’ খননের আগে মাটি পরীক্ষা করাও হয়নি বলেও অভিযোগ কমিশনের। তুলিকা বলেন, ‘‘কোথাও খননকার্য চললে সেখানে যাতে কেউ না আসে তা জানাতে হয়। বিএসএফ যেটা করেছে তা বেনজির। কী করে রাজ্যের চার শিশুর প্রাণ গেল তা জানতে চাওয়া হয়েছে জেলা প্রশসনের কাছে। পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করি। আমরা চাই যে কোনও পদের কোনও ব্যক্তির রং না দেখে নিরপেক্ষ পদক্ষেপ করুন।’’
বিএসএফ অবশ্য এই ঘটনার দায় তাদের নয় বলে মঙ্গলবার রাতেই একটি প্রেস বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আদৌ বিএসএফ কোনও খননকার্য চালায়নি। বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, সোমবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিট নাগাদ চেতনগাছ আউট পোস্টে কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ানরা অস্বাভাবিক কিছু শব্দ শুনতে পান। ৩০০ মিটার দূরের এলাকা থেকে ওই আওয়াজ আসছে জানার পরে কোম্পানি কমান্ডারকে খবর দেন জওয়ানরা। একটি দল ঘটনাস্থলে সঙ্গে সঙ্গেই চলে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামবাসীরা মাটি খুঁড়ে কয়েকটি শিশুকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। গ্রামবাসীদের থেকে জানা যায়, ওই এলাকায় কেউ জেসিবি দিয়ে মাটি খুঁড়ছিল। কয়েকটি ট্র্যাক্টরও ছিল সেখানে। পাশেই খেলছিল কয়েক জন। মাটিতে ধস নামলে তারা গর্তে পড়ে যায়। এর পরে বিএসএফ কর্মীরা শিশুদের উদ্ধার করেন। বিএসএফের দু’টি গাড়ি করেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।