শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
কোন্দল থামার লক্ষণ নেই রাজ্য বিজেপিতে। আজ পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার দলীয় কর্মসূচিতে সেই বিভাজন ফের স্পষ্ট হয়ে পড়ল। দিল্লিতে থাকা সত্ত্বেও আজ নির্বাচন কমিশনে যাওয়া প্রতিনিধি দলে অনুপস্থিত রইলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। এ দিকে আজ রাজ্য বিজেপি জানিয়েছে, বাংলার বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যে বৈঠক বুধবার হওয়ার কথা ছিল তা বৃহস্পতিবার হবে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আজ জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ঠিক করতে স্বল্প মেয়াদের জন্য হলেও পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের আর্জি জানানো হবে।
দীর্ঘদিন ধরেই দলে বেসুরে বাজছিলেন লকেট। চলতি মাসের শুরুতে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন হুগলির সাংসদ। পাল্টা প্রশ্ন উঠেছিল লকেট নিজে দলের জন্য কতটা কাজ করেছেন। জবাবে লকেট দলের নেতাদের আত্মবিশ্লেষণের ডাক দেন। সব মিলিয়ে দূরত্ব বাড়ছিল উভয় শিবিরের। যা আজ ফের প্রকট হয়ে পড়ল লকেটের অনুপস্থিতিতে।
যদিও দলের সাংসদদের মধ্যে মনোমালিন্য রয়েছে বলে মনে করেন না রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। আজ লকেটের না আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “লকেট আসতে পারবেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে কোনও মতপার্থক্য নেই।” দলের অন্য একটি অংশের মতে, গোড়া থেকেই লকেটের নাম ছিল না প্রতিনিধি দলের তালিকায়। প্রশ্ন উঠেছে তা হলে কি লকেটকে এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়েছে বর্তমান নেতৃত্ব। সুকান্তের দাবি, “সংবাদমাধ্যম যতই জল্পনা করুক, লকেটের সঙ্গে কারও কোনও মতপার্থক্য নেই।’’
কিন্তু রামপুরহাট হত্যাকাণ্ডের পর থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে পাশে নিয়ে দু’টি সাংবাদিক বৈঠক করেন লকেট। প্রথমটি বিজেপির সদর কার্যালয়ে। অন্যটি গত কাল সংসদ চত্বরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভির পাশে দাঁড়িয়ে। বিষয়টি চোখ এড়ায়নি রাজ্য নেতাদের। দলের এক সাংসদদের কথায়, লকেট নিজে থেকেই সাংবাদিক সম্মেলন করছেন না কি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে, তা স্পষ্ট হওয়া দরকার। এতে ভুল বার্তা যাচ্ছে।
আগামিকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক পিছিয়ে যাওয়ায় পরিবর্তে দলের জাতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। রামপুরহাটের ঘটনার পরে সেখানে গিয়েছিলেন সুকান্ত মজুমদার-সহ দলের পাঁচ প্রতিনিধি। সেই ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট নড্ডার হাতে তুলে দেবেন বাংলার সাংসদেরা। কালকের পরিবর্তে বৃহস্পতিবার মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসার দিন ঠিক হয়েছে বাংলার বিজেপি সাংসদদের। প্রধানমন্ত্রীর সামনে বাংলার সাংসদেরা কে কী বক্তব্য রাখবেন, তা স্থির করতে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকের শেষে বিজেপি সাংসদ তথা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ অধিকারীর বাড়িতে ফের একপ্রস্ত আলোচনায় বসেন সুকান্ত-দিলীপেরা।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আসানসোলে বলেন, “আমাদের সাংসদদের ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা বিনয়ের সঙ্গে, তাঁর কাছে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের আর্জি জানাব। বিধানসভা ভেঙে দিতে বলছি না। কিন্তু ছ’মাস-ছ’মাস করে এক বছর অন্তত রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে। তার পরে, যাঁরা বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ, রাজ্যের শাসন ভার তাঁদেরকেই ফিরিয়ে দিতে হবে।”