BJP

পদ্মবনে কাঁটার পর কাঁটা, জেলায় জেলায় ক্ষোভের মুখে নেতৃত্ব, অভিযোগ উঠছে নেতা বাছাই নিয়ে

অগস্টের শুরুতে ১৬টি জেলায় সভাপতি বদল করেছে বিজেপি। এর পর দু’মাস কেটে গেলেও সেই নিয়োগ নিয়ে ক্ষোভ মেটেনি। মাঝেমধ্যেই দলের ভিতরের ‘অস্বস্তি’ বাইরে বেরিয়ে আসছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ২০:৪২
Share:

প্রায়ই ক্ষোভের মুখে পড়ছেন বিজেপি নেতারা। — ফাইল চিত্র।

দলের অন্দরে আর শান্তি নেই রাজ্য বিজেপির। একটি জেলার ক্ষোভ নিরসনের চেষ্টার মধ্যেই আর এক জেলায় তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। কখনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দলীয় দফতরে তালাবন্দি করে রাখা তো কখনও পুরনো নেতার দল ছাড়ার হুঁশিয়ারি! রাজ্য দফতরেও বিক্ষোভের আগুন দেখা গিয়েছে। কিন্তু এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যা ঘটল, তা বিজেপির মতো ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ’ দলে বেমানান বলে দাবি করছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারাই।

Advertisement

রাজ্য বিজেপির সংগঠনের শীর্ষ সাংগঠনিক নেতা খোদ অমিতাভ চক্রবর্তীকে বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর জেলা কার্যালয়ে ‘বন্দি’ করা রাখা হয়। তাঁর সঙ্গেই ‘বন্দি’ ছিলেন রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ও। তবে জেলায় জেলায় এই ক্ষোভকে বড় করে দেখতে চাইছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, সাংগঠনিক ৪৩টি জেলার মধ্যে কয়েকটিতে কারও কারও ক্ষোভ যে রয়েছে তা ঠিক। তবে তেমন জেলার সংখ্যা নেহাতই কম।

রাজ্য বিজেপি সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)-এর দায়িত্বে রয়েছেন অমিতাভ। বিজেপির সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী এই পদে সব সময়েই থাকেন আরএসএস প্রচারক। সেই ভাবেই নিয়োগ অমিতাভের। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে মুরলীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপির দফতরের সামনে পোস্টার পড়তে দেখা গিয়েছিল। যা অতীতে কোনও সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)-এর ক্ষেত্রে হয়নি। এর পর বুধবারের ঘটনা বিজেপির ক্ষেত্রে ‘অশনিসংকেত’ বলেই মনে করছেন অনেকে।

Advertisement

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়নগর লোকসভা এলাকার বৈঠক করতে বারুইপুরে গিয়েছিলেন অমিতাভ ও জগন্নাথ। বিজেপির সাংগঠনিক জয়নগর জেলার সভাপতি উৎপল নস্করকে নিয়ে কর্মীদের অভিযোগ ছিল। মূল অভিযোগ ‘স্বজনপোষণ’ নিয়ে। দুই রাজ্য নেতাকে কাছে পেয়ে সেই সব অভিযোগ শোনাতে চান জেলার অন্য নেতারা। যোগ দেন এক দল কর্মীও। বাদানুবাদ শুরু হয়ে যায়। একটা সময়ে পরিস্থিতি এমন জায়গায় চলে যায় যে, দুই নেতাকে ঘণ্টা তিনেক দলীয় দফতরে আটকে রাখা হয়। নিজের চেম্বারে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকতে হয় জেলা সভাপতি উৎপলকে। পরে রাজ্য নেতাদের উদ্যোগে তাঁদের মুক্ত করা হয়। এ বিষয়ে রাজ্য বিজেপি নেতারা অবশ্য মুখ খুলতে চাইছেন না। কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও।

ঘটনাচক্রে, বুধবার সুকান্ত নিজেও বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। তা-ও নিজের লোকসভা কেন্দ্র বালুরঘাটের হিলিতে। তবে তাঁকে ঘেরাও করেন তৃণমূল কর্মীরা। যদিও নিজের লোকসভা এলাকায় সুকান্তকে ঘেরাও করা হলে দলের অন্য নেতা-কর্মীরা কী করছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে উত্তরবঙ্গের তুলনায় দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির জেলা সংগঠন নিয়ে ক্ষোভ অনেক বেশি। তার মধ্যেও আবার তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়।

গত অগস্ট মাসেই দলের সাংগঠনিক জেলা ডায়মন্ড হারবারের সহ-সভানেত্রী সবিতা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখানো হয় সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের বিজেপি দফতরে। ওই জেলার সভাপতি অভিজিৎ সর্দারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বিনা আলোচনায় ২০ জন মণ্ডল সভাপতি বদলের। তার পর দিনই দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে আসেন বিজেপির সল্টলেক দফতরে। সে দিনও রাজ্য নেতারা আটকে পড়েছিলেন। বাইরে আগুন জ্বেলে বিক্ষোভ দেখানো হয়। অভিযোগ ছিল গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসাবে জয়ী নবেন্দুসুন্দর নস্করকে জেলার সভাপতি করা নিয়ে।

ওই জেলারই যাদবপুর সাংগঠনিক জেলায় কর্মীদের বিক্ষোভে পিছু হঠতে হয় রাজ্য নেতৃত্বকে। সদ্য যাদবপুর লোকসভা এলাকা নিয়ে নতুন জেলা তৈরি করেছে রাজ্য বিজেপি। নতুন জেলার প্রথম সভাপতি করা হয় কুন্তল চৌধুরীকে। কিন্তু জেলার নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভের জেরে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সভাপতি বদল করা হয়। এখন সভাপতি মনোরঞ্জন জোতদার।

তবে এটা নতুন নয়। কিছু দিন আগেই একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার। গত ১২ সেপ্টেম্বর বাঁকুড়া জেলা দফতরে সুভাষ ঢুকতেই তাঁকে ঘিরে ধরেন দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। দেওয়া হয় স্লোগান। এর পর সুভাষকে দলীয় দফতরেরই একটি ঘরে ঢুকিয়ে তালা মেরে দেন সমর্থকেরা। বন্ধ ঘরের সামনে চলতে থাকে স্লোগান। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ আসে। তালাবন্দি সুভাষকে পুলিশই উদ্ধার করে। অন্য দিকে, বিক্ষোভরত কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সুভাষের নিরাপত্তারক্ষীদেরও রীতিমতো ধস্তাধস্তি বেধে যায়।

পূর্ব মেদিনীপুরেও জেলা সভাপতি বদল নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ্যে চলে আসে। ১৭টি জেলার সভাপতি পদে রদবদল করেছে বিজেপি। এর পর থেকেই জেলায় জেলায় বিক্ষোভ বাড়তে থাকে। রদবদলে তমলুক সাংগঠনিক জেলায় বিজেপির নতুন সভাপতি হয়েছেন হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল। বিজেপিতে ‘শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত তাপসী দায়িত্ব পেয়ে নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা করতেই রাজনীতি ছাড়ার হুমকি দেন নন্দীগ্রামের ‘আদি’ নেতা প্রলয় পাল। শেষ পর্যন্ত তাঁকে বিজেপি ধরে রাখতে পারলেও নন্দীগ্রামের জেলায় গেরুয়া শিবিরের ‘অস্বস্তি’ কাটেনি। তবে শুধু তমলুক নয়, সব জেলা নিয়েই অস্বস্তিতে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘সব পক্ষকে কখনও খুশি করা যায় না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এমনও অভিযোগ উঠেছে যে, কাজের লোকেদের গুরুত্ব কমিয়ে কাছের লোকেদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেই কারণেই কর্মীদের ক্ষোভ। তবে দল বড় হলে এটা হবেই। ক্ষোভ থাকলেও সব সামালও দেওয়া যাচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement