উত্তরবঙ্গের নেতাদের মধ্যেই মতানৈক্য স্পষ্ট। কড়া বার্তা নড্ডার। ফাইল চিত্র
পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবিতে কোনও নেতা মুখ খুলতে পারবেন না। দলীয় বৈঠকে এমন নির্দেশ দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। বৃহস্পতিবার সায়েন্স সিটির প্রেক্ষাগৃহে দলীয় বৈঠকে শুধু বাংলা ভাগ প্রসঙ্গেই নয়, নীতিগত বিষয়ে যে কেউ মুখ খুলতে পারবেন না বলে নির্দেশ দিয়েছেন নড্ডা। বিজেপি সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে নড্ডা জানিয়ে দেন, দলের ঘোষিত নীতির বাইরে কেউ কিছু বলতে পারবেন না। আর দলের নীতি নিয়ে কিছু বলতে হলে সেটা বলবেন রাজ্যের প্রধান নেতারা।
পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিজেপি নেতা সরব হয়েছেন। তবে দলের পক্ষ থেকে কখনও সেই দাবিতে সিলমোহর দেওয়া হয়নি। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব বার বার বলে এসেছেন, দীর্ঘদিন উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষের দাবি এটা। সেটাই বলেন জনপ্রতিনিধিরা। এই ভাষায় সাফাই দেওয়া হলেও বাংলা ভাগ নিয়ে অস্বস্তি থেকেই গিয়েছে গেরুয়া শিবিরের। সেটাই সামনে এসে গেল দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সফরের মধ্যে। বৃহস্পতিবার কার্শিয়াঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপদ শর্মার বক্তব্য থেকেই বিতর্কের শুরু। ‘আমরা বঙ্গভঙ্গ করে নেবই’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। অন্য দিকে, দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা এবং রায়গঞ্জের সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী জানিয়ে দিয়েছেন, দলের এমন কোনও লক্ষ্য নেই। তাঁরা ব্যক্তিগত ভাবেও আলাদা রাজ্যের পক্ষে নন।
সম্প্রতি গোপন ডেরা থেকে ভিডিয়ো বার্তা দেন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা কেএলও প্রধান জীবন সিংহ। তাতে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোচ-কামতাপুরে পা ফেলবেন না। কোচ-কামতাপুর গঠনে কোনও হস্তক্ষেপ বা বিরোধিতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করতে পারবেন না। বলপূর্বক কিছু করতে এলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হবে। লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন উৎসর্গ করে দেব। রক্তের বন্যা বইয়ে দেব।” এরই প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রক্ত দেওয়ার জন্য তৈরি। বাংলাকে ভাগ করতে দেব না।’’ সঙ্গে মমতা আরও বলেন, ‘‘আমাকে ভয় দেখাচ্ছে ভাগ না করলে (উত্তরবঙ্গ) নাকি আমাকে মেরে দেবে! তোমার ক্ষমতা থাকলে আমার বুকে বন্দুক ঠেকাও। আমি অনেক বন্দুক দেখে এসেছি। আমাকে এ সব বন্দুক-টন্দুক দেখিয়ো না।’’ ভোট এলে বিজেপি ভাগাভাগির কথা বলে বলেও মন্তব্য করেন মমতা।
এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার কার্শিয়াঙের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ মমতার উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনার যে রক্ত রয়েছে সেটা কোনও রোগীর জন্য বাঁচিয়ে রাখুন। আপনার কাপড়ে কোনও দাগ লাগতে দেব না কিন্তু বঙ্গভঙ্গ করে নেব।’’ বিষ্ণুপ্রসাদের এই মন্তব্যের পাশে অবশ্য নেই তাঁর দল। এই প্রসঙ্গে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদের দাবি, এটা তাঁদের দলের লক্ষ্য নয়। রাজু বলেন, ‘‘বিজেপির এমন কোনও লক্ষ্য নেই। যে লক্ষ্য রয়েছে তাতে দার্জিলিং, তরাই, ডুয়ার্সের যে সমস্যা, তার সমাধান। সেটা ভারতীয় সংবিধান মেনেই হবে। এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান হবে।’’ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রীর বক্তব্য, ‘‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে অখণ্ড বাংলা চাই। তবে এটা ঠিক যে উত্তরবঙ্গের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই বঞ্চিত। তাই জনপ্রতিনিধিদের সে সব কথা সাধারণ মানুষের কাছে শুনতে হয়। আমিও উত্তরবঙ্গের সাংসদ। আমাকেও শুনতে হয়। কিন্তু তা বলে যে কেউ দাবি তুলতে পারেন না। বিজেপি একটা সর্বভারতীয় দল আর তার নীতিগত সিদ্ধান্ত অনেক উপরে হয়।’’
বাংলা ভাগ নিয়ে একই দিনে বিজেপি শিবিরে দু’রকম মন্তব্য নিয়ে খোঁচা দেয় তৃণমূলও। দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘বিজেপির মনে কী রয়েছে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কার্সিয়াঙের বিধায়ক চাইছেন বাংলা ভাগ হোক। এখন রাজ্যে রয়েছেন বিজেপি সভাপতি নড্ডা। দলের নীতি ওঁর স্পষ্ট করে বলে দেওয়া উচিত। আমাদের নীতি তো মমতা বলেই দিয়েছেন। শরীরে রক্ত থাকতে বাংলা ভাগ আমরা মেনে নেব না।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।