কেশপুরের সভায় বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে সমর্থনের জন্য আবারও বাম ও কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের কাছে খোলাখুলি আহ্বান জানালেন শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার পুরনো ‘লাল-দুর্গ’ কেশপুরের সভায় ফের শুভেন্দুর বার্তা, ‘‘বামফ্রন্ট করুন বা কংগ্রেস, সব বিধানসভা ভোটের পরে করবেন। বিধানসভা ভোট পর্যন্ত পদ্মফুল করতে হবে। আমরা ছাড়া কেউ (তৃণমূলকে) হারাতে পারবে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এখানে প্রচুর বামপন্থী মানুষ আছেন। অনেকে বিজেপিতে এসেছেন। অনেকে হয়তো এখনও আসেননি। তাঁদের বলব, যে দল করছেন করুন। ভোটটা বিজেপিকে দিন।’’
এর আগে দুর্গাপুর ও চন্দ্রকোনাতেও একই সুরে বামে থেকেও রামে ভোট দেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন শুভেন্দু। বিরোধী ভোট ভাগাভাগির সুযোগ যাতে তৃণমূল না পায়, তা নিশ্চিত করতেই দলবদলু বিজেপি নেতা বারবার এই আহ্বান করছেন বলে ব্যাখ্যা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
তবে শুভেন্দুর ডাকে কেউ সাড়া দেবে না বলেই দাবি বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের। সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী এক সময় দুই মেদিনীপুর ও জঙ্গলমহল থেকে লাল পতাকা মুছে দিতে চেষ্টার কসুর করেননি। তাঁর মুখে এমন আহ্বান হাস্যকর। মানুষ ঠিক জবাব দেবেন।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য সৌমেন খানও বলছেন, ‘‘বিজেপি বিভেদের রাজনীতি করে। মানুষ ওদের প্ররোচনায় পা দেবেন না।’’ আর কেশপুরের তৃণমূল বিধায়ক শিউলি সাহার কটাক্ষ, ‘‘ওঁর কথা থেকেই স্পষ্ট যে, কেশপুরে বিজেপির পায়ের তলায় মাটি নেই। কেশপুরের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছেন, থাকবেনও।’’
কেশপুর যে বরাবর শাসকের সঙ্গে থাকে, এই প্রবণতাকেও এ দিন আনন্দপুরের সভায় নিশানা করেছেন শুভেন্দু। অভিযোগ করেছেন, রাজ্যে পালাবদলের পরেও কেশপুরে গণতন্ত্র ফেরেনি। তিনি বলেন, ‘‘সেই একই বর্গি ব্যবস্থা, সেই একদলীয় শাসনতন্ত্র, আমি একা থাকব আর কেউ থাকব না। এটা কেশপুরে গত তিন দশক ধরে চলছে। বিজেপির সরকার হলে গণতন্ত্র ফিরবে।’’ স্থানীয়দের অনেকে অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তৃণমূল আমলে কেশপুরে সন্ত্রাসের দায় শুভেন্দুর উপরেও বর্তায়। তিনি যখন তৃণমূলের তরফে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পর্যবেক্ষক ছিলেন, তখনও কিন্তু এখানে বিরোধীদের কর্মসূচি করতে দেওয়া হয়নি বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে।
তৃণমূলের আরও কয়েক জন সাংসদ বিজেপিতে যাবেন বলেও এ দিন দাবি করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূলের ২২ জন এমপি ছিল। এক জন তো সুনীল মণ্ডল চলে গিয়েছেন। আরও ৫-৬ জন চলে যাবেন এর মধ্যে।’’ কেশপুর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের সমর্থন আদায়েরও চেষ্টা করেছেন শুভেন্দু। তাঁর আহ্বান, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকেরা একটা ভোটও তৃণমূল কোম্পানিকে দেবেন না। যাঁরা (বাইরে) আছেন, ফোন করে ডেকে আনবেন (ভোটের সময়)।’’