Suvendu Adhikari

‘তৃণমূল-বিজেপি লড়াই কলকাতা বনাম জেলার লড়াই’, নয়া কৌশলের সুর বাঁধলেন শুভেন্দু

এই প্রথম রাজ্য বিজেপি-র কোনও শীর্ষ নেতাকে ছাড়া সভা করতে দেখা গেল শুভেন্দুকে। ‘কলকাতা বনাম জেলা’-র ভোট কৌশল বেঁধে দিলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:৪৯
Share:

দাঁতনের সভায় শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।

শনিবার ছিল মাও জে দং-এর জন্মদিন। চিন বিপ্লবে তাঁরই ‘গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরো’ লাইন রবিবার যেন বঙ্গভোটের প্রেক্ষাপটে এনে ফেললেন শুভেন্দু অধিকারী
রাজ্যে তৃণমূল শাসনকে দক্ষিণ কলকাতার শাসন আখ্যা দিয়ে শুভেন্দু আওয়াজ তুললেন “এ লড়াই গ্রামের লড়াই, জেলার লড়াই।”

Advertisement

গত ১৯ ডিসেম্বর অমিত শাহের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগদান করেন শুভেন্দু। রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের সরাই বাজারে সভা করলেন। তার আগে রোড শো। এই প্রথম রাজ্য বিজেপি-র কোনও শীর্ষ নেতাকে ছাড়া সভা করতে দেখা গেল তাঁকে। দাঁতনের সভাতেই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ‘কলকাতা বনাম জেলা’-র ভোট কৌশল বেঁধে দিলেন তিনি। দক্ষিণ কলকাতাই ছিল তাঁর মূল নিশানা। শুভেন্দু বলেন, “পুরনো কলকাতার মানুষকেও বলব, আমাদের পাশে দাঁড়ান।’’ তাঁর খোঁচা, “উত্তর কলকাতা পেয়েছে শুধু একজন বাটখারা মন্ত্রী (ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে), সব দক্ষিণ কলকাতার।”

আরও পড়ুন: নীল বাড়ির লক্ষ্যে শোভনকে গুরুত্ব বিজেপির, সঙ্গে বৈশাখী-শঙ্কু​

Advertisement

শুভেন্দুর অভিযোগ, দক্ষিণ কলকাতার কয়েকজন মিলেই গোটা রাজ্য এবং সরকার চালাচ্ছেন। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন, “এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী থেকে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীই দক্ষিণ কলকাতার। ২২জন তৃণমূল সাংসদ। একজন যদিও কমেছে। তাঁর মধ্যে ১১ জনই কলকাতার। ৪০ জন মন্ত্রীর মধ্যে কলকাতার ১১ জন। ২-৪ জনের হাতে সমস্ত মন্ত্রিত্ব রয়েছে। তা হলে আমরা কি বানের জলে ভেসে এসেছি?”

পশ্চিমবঙ্গে যেই ক্ষমতায় থাকুন, গ্রাম বা জেলার জোরেই জিততে হয়। মূল কলকাতা এবং শহরতলি ধরলে খানকুড়ি বিধানসভা আসন। তার অর্ধেক দক্ষিণে। সিপিএম থেকে তৃণমূল, গ্রাম বাংলায় ভিত্তি করেই ক্ষমতায় থাকতে হয়। বোঝা যাচ্ছে সেই হিসেব মাথায় রেখেই তৃণমূলকে ‘দক্ষিণ কলকাতার দল’ বলে কোণঠাসা করার কৌশল নিতে চলেছে বিজেপি।

মালা পরিয়ে শুভেন্দুকে অভ্যর্থনা জেলা বিজেপি-র সদস্যদের। —নিজস্ব চিত্র।

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর হাতে বাংলাকে তুলে দিতে না পারলে, রাজ্যটাকে বাঁচানো যাবে না বলে রবিবারও মন্তব্য করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘বাংলা ও দিল্লিতে একই দলের সরকার চাই। মোদীজির হাতে তুলে দিতে না পারলে, রাজ্যটা আর বাঁচবে না। সোনার বাংলা গড়তে হবে। বিজেপি-কে আনতে হবে।’’

আরও পড়ুন: দু’ঘণ্টার বৈঠক ধনখড়ের সঙ্গে, সৌরভ বললেন, জল্পনা করবেন না​

শুভেন্দুকে জবাব দিতে সোমবার দাঁতনে পাল্টা মিছিল রেখেছে তৃণমূল। সেখানে দলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘কোটি কোটি টাকা খরচ করে সভায় লোকজড়ো করেছে ওরা। শুভেন্দুর মোকাবিলা করতে দাঁতনের মানুষই যথেষ্ট। কোনও শীর্ষ নেতা ছাড়াই কাল মিছিল করব আমরা।’’

একসময় শুভেন্দুর হাতে থাকা পরিবহণ দফতরে বিপুল দুর্নীতি হয়েছে বলেও সম্প্রতি তৃণমূলের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে। শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। সবে তো ট্রেলার, পুরো সিনেমা এখনও বাকি। কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি ইচ্ছাকৃত ভাবে আটকে রাজ্যের নামে চালানো হয়েছে। আমি ভিতরে ছিলাম। কিন্তু ঘেন্না ধরে গিয়েছে। সবুজসাথীর সাইকেল নিয়ে সকলে বলেছেন, কী সাইকেলের ছিরি! ভাঙা সাইকেল সারাতেই ৪০০ টাকা গিয়েছে।’’

শুভেন্দু বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের তরফে তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’, ‘মিরজাফর’, বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘‘তৃণমূলের এক সাংসদ বলছেন, মেদিনীপুরে বিশ্বাসঘাতক জন্মায়। আমি বলি, বর্ণ পরিচয়ের জনক বিদ্যাসাগর, ক্ষুদিরাম বসু, মাতঙ্গিনী হাজরা, প্রথম তাম্রলিপ্ত সরকার, সব মেদিনীপুরের। বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার আগে মন্ত্রিসভা, বিধায়ক পদ ছেড়েছি। অন্য দলের হয়ে রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে আমাদের। যাঁরা মেদিনীপুরকে বিশ্বাসঘাতক বলছেন, তাঁদের জবাব দিতে হবে।’’

পথসভায় শুভেন্দুকে ঘিরে উচ্ছ্বাস বিজেপি সমর্থকদের। —নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: ‘তোলাবাজ তো তুমি’! নারদ পর্ব শুভেন্দুকে পাল্টা তোপ অভিষেকের​

লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে বিজেপি ১৮টি আসন পাওয়ার পর তৃণমূল নেতারা ভয় পেয়েছেন বলেও এ দিন দাবি করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘ছিন্নমূল লোকজন এসে অনেক বড় বড় কথা বলে গিয়েছেন। যে দিন বিজেপি জিতল, সে দিন সকলে ফোন সুইচ অফ করে দিয়েছিলেন। সবার ফোন বন্ধ, সব পার্টি অফিসে তালা। ওঁদের ঘর থেকে যে বের করে এনেছিল, ওঁদের কাছে আজ সে-ই বিশ্বাসঘাতক।’’

প্রয়োজন পড়লে ডায়মন্ড হারবারেও বিজেপি-র হয়ে তিনি সভা করতে প্রস্তুত বলে জানান শুভেন্দু। বিজেপি নেতৃত্বের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ডায়মন্ড হারবারে আমাকে ডাকবেন,। আমি সভা করতে যাব। সে দিন হেস্টিংসের অফিসে গেলাম। দেখি সুনীল মন্ডলকে আক্রমণ করছে। সব জিহাদি। আমি ঢোকার সময় কিছু বলতে পারেনি। পেছনে হই হই করছে। ওরা সব জেহাদি।’’

এ দিন সরাই বাজারে শুভেন্দুর সভা চলাকালীনই ডায়মন্ড হারবারে সভা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে সেখান থেকে শুভেন্দুকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। পথসভা করে সরাই বাজারে যাওয়ার পথে ফের ‘তোলাবাজ ভাইপো হটাও’ স্লোগান তোলেন শুভেন্দুও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement