প্রতীকী চিত্র।
আষাঢ় গড়িয়ে শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহ শেষ হতে চলল। এখনও লাগাতার ঝমঝমিয়ে বৃষ্টিপাতের নামগন্ধ নেই দক্ষিণবঙ্গে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় শুকিয়ে যাচ্ছে ধানের বীজতলা। জলের অভাবে পাটচাষিরাও মহা ফাঁপড়ে। কার্যত আকাশের দিকে তাকিয়ে হাপিত্যেস করছেন চাষিরা। এই অবস্থার মধ্যে, একটু হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে উপকূলে নতুন একটি নিম্নচাপের ইঙ্গিত। এখনও অবশ্য সম্পূর্ণ নিম্নচাপটি তৈরি হয়নি। তবে আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, খুব তাড়াতাড়ি নিম্নচাপ সক্রিয় হতে পারে। হলে, আগামী শুক্রবার থেকে ভারী বৃষ্টি নামতে পারে কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে।
জুন মাসের ১ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত, রাজ্যে বৃষ্টির ঘাটতি ৩১ শতাংশে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গে আবার অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে ঘাটতির পরিমাণ ৫৪ শতাংশ। এই মরসুমে আদৌ বৃষ্টির ঘাটতি মিটবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যেই। ঘাটতি হলে অবধারিত ভাবে তার প্রভাব পড়বে খাদ্যশস্য উৎপাদনে। শুধু এ রাজ্যেই নয়— বিহার, ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যেও চাষিরা জলের অভাবে সমস্যায় পড়ে রয়েছেন এখনও। অর্থাত্ দেশজুড়েই বৃষ্টির ঘাটতি চলছে।
কেন্দ্রীয় আবহওয়া দফতর জানাচ্ছে, মোটামুটি ৯৬ থেকে ১০৪ শতাংশের মধ্যে বৃষ্টি হলে স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে বলে ধরা হয়। এ বার দেরিতে মৌসমী বায়ুর আগমন ঘটায় উত্তর-পূর্ব ভারতে কিছুটা কম বৃষ্টি হতে পারে (৯৩ শতাংশ) বলে অনুমান। দক্ষিণ ভারতে ৯৫ শতাংশ, মধ্য ভারতে ৯৯ শতাংশ বৃষ্টিপাত হতে পারে। উত্তর-পশ্চিমে ১০০ শতাংশের আশপাশে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, উড়িশা, ঝাড়খণ্ডে যে বৃষ্টি কম হবে, তার একটা ইঙ্গিত আগে থেকেই ছিল। তবে মৌসিমী বায়ু ঢুকে যাওয়ার মাস খানেকের পরও যে অনাবৃষ্টির দশা চলছে, তেমন আশঙ্কার কথা কারও মাথাতেই আসেনি।
গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
কেন এই ঘাটতি? এমনিতে এ বছর দু’সপ্তাহ পিছিয়ে বর্ষার আগমন ঘটেছে। সাধারণত দক্ষিণবঙ্গে ৮ জুন বর্ষা ঢুকে যাওয়ার কথা। এ বার ২১ জুন বর্ষা পৌঁছেছে। ফলে প্রথম থেকেই ঘাটতি দিয়ে শুরু হয়েছে বর্ষার পথ চলা। তা ছাড়া অন্যান্য বছরে এই সময়ে গাঙ্গেয় বঙ্গোপসাগরের তিন থেকে চারটি নিম্নচাপ তৈরি হয়ে যায়। নিম্নচাপের কারণে উত্তরের দিকে থাকা মৌসুমী অক্ষরেখা দক্ষিণবঙ্গের দিকে নামতে থাকে। সে কারণে বৃষ্টিপাতও বাড়তে থাকে। কিন্তু এ বছর তেমন অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কিছু দিন আগে একটি নিম্নচাপ তৈরি হলেও, তা ওড়িশার দিকে সরে গিয়েছিল। একে দুর্বল মৌসুমী বায়ু, তার পর গত এক মাস ধরে তা নিম্নচাপের হাত না ধরতে পারায় সে ভাবে বর্ষার দেখা মিলছে না।
আরও পড়ুন: বন্ধ হোক গণপিটুনি, মুক্ত চিন্তার পক্ষে সওয়াল করে প্রধানমন্ত্রীকে পত্রাঘাত বিদ্বজ্জনদের
এর মধ্যেই আশার আলো দেখাচ্ছে হাওয়া অফিস। কেন্দ্রীয় মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখনও পর্যন্ত বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে রাজ্যে। তবে নতুন একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে চলেছে। তার জেরে ২৬ তারিখ থেকে ভাল বৃষ্টি হওয়ার কথা। এখন দেখার, মরসুম শেষে ঘাটতি মেটে কি না।” দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
যদি শেষ পর্যন্ত নিম্নচাপের জেরে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি হয়, তা-হলে এই মরসুমে বৃষ্টির ঘাটতি কী মিটবে? এমনিতে ১৫ অক্টোবর খাতায়-কলমে বর্ষার বিদায় ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু গত কয়েক বছরে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই বর্ষা বিদায় নিচ্ছে। এ বছর কী হবে বোঝা যাচ্ছে না?
আরও পড়ুন: নজরে চিন, কাল থেকে দেশের প্রথম ‘স্পেস ওয়ার’ মহড়া ভারতীয় সেনার
এখনও পর্যন্ত শুধু মাত্র গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গে কলকাতা-সহ ১৩টি জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে ৫৪ শতাংশ। কৃষিপ্রধান জেলাগুলির করুণ অবস্থা। হুগলিতে ৫০ শতাংশ, হাওড়ায় ৮১, বর্ধমানে ৫৩, উত্তর ২৪ পরগনাতে ৬৫, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় ৫৯, নদিয়ায় ৪৯, মুর্শিদাবাদে ৪৭ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে।
ফলে এই জেলাগুলির ধানচাষিরা সমস্যায় পড়েছেন সব থেকে বেশি। দক্ষিণবঙ্গে যেমন বৃষ্টির খরা চলছে, উল্টো দিকে আবার উত্তরবঙ্গে ঢেলে বৃষ্টি হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে ঘাটতি মিটিয়ে ৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে হাওয়া দফতর সূত্রে খবর।