ছবি: এএফপি
আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড়টি (নাম তার ‘মহা’) অতিপ্রবল হয়ে উঠেছে। বঙ্গোপসাগরের আঁতুড়ে বাড়তে থাকা ঘূর্ণিঝড়টিও সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ের থেকে শক্তি বাড়িয়ে প্রবল বা অতিপ্রবল হয়ে উঠতে পারে বলে দিল্লির মৌসম ভবনের আশঙ্কা। তার উপরেও নজরদারি চলছে ২৪ ঘণ্টা। একসঙ্গে দেশের দুই প্রান্তে দুই ঘূর্ণিঝড়ের পাল্লা দিয়ে বেড়ে ওঠার জন্য সাগরজলের উষ্ণতা বৃদ্ধিকেই দায়ী করা হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরের সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের মতিগতি নিয়ে দোলাচলে রয়েছে হাওয়ামোরগ। ঝড়টি পশ্চিমবঙ্গের কোথাও আঘাত হানবে, নাকি ও-পার বাংলায় পাড়ি দেবে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না আবহবিদেরা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলছেন, বুধবার পর্যন্ত সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি অতিগভীর নিম্নচাপ হিসেবে রয়েছে। বিকেলে তার অবস্থান ছিল কলকাতা থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে। আজ, বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় দানা বাঁধতে পারে। সে উত্তর ওড়িশা থেকে পশ্চিমবঙ্গ এবং লাগোয়া বাংলাদেশের দিকে যেতে পারে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ঠিক কোথায় আছড়ে পড়বে, এখনই তা বলা সম্ভব নয়। তবে সাগর উত্তাল হবে। তাই মৎস্যজীবীদের সাগরে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। যাঁরা ইতিমধ্যে বারদরিয়ায় চলে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরে আসতে বলা হয়েছে।
আবহবিদেরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টি সাগরের উপরে যত বেশি ক্ষণ থাকবে, ততই সে জলীয় বাষ্প শুষে নিয়ে শক্তি বাড়াতে থাকবে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত এ রাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে। আপাতত উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। তবে গণেশবাবু বলছেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হওয়া এবং উপকূলের আরও কাছে আসার আগে সবিস্তার পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়।’’
আরও পড়ুন: মালদহ-মুর্শিদাবাদ ভেঙে নতুন ৪ জেলার পরিকল্পনা নবান্নের, ঘোষণা হতে পারে আগামী মাসেই
সাগর যে উত্তরোত্তর উষ্ণ হচ্ছে, তা মেনে নিচ্ছে মৌসম ভবনও। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বুধবার বলেন, ‘‘গত দু’তিন বছর ধরে বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরের জলের উষ্ণতায় একটা বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। তবে এই কয়েক বছরের তথ্যের সাহায্যে উষ্ণায়ন সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যাবে না।’’
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, সাগরে জলের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁলেই ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই মুহূর্তে আরব সাগরে যে-ঘূর্ণিঝড় রয়েছে এবং বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে যে-ঘূর্ণিঝড়, উভয়ের পিছনেই ক্রিয়াশীল রয়েছে সাগরজলের বর্ধিত উষ্ণতা। দেশের দু’দিকে একসঙ্গে জোড়া ঘূর্ণিঝড় তৈরির এমন পরিস্থিতি সচরাচর দেখা যায় না।
আবহাওয়া দফতরের খবর, বঙ্গোপসাগরে জলের তাপমাত্রা এখন ২৮ থেকে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, দুই সাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্যই দু’দিকে এমন পরিস্থিতি। এমনিতেই বর্ষা ও শীতের মাঝামাঝি সময়ে ঘূর্ণিঝড় বেশি তৈরি হয়। তার উপরে সাগরজলের ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা সেই পরিস্থিতিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। শুধু ঘূর্ণিঝড় তৈরি নয়, সাগরের জলের উষ্ণতা বেশি থাকলে জলীয় বাষ্প শক্তি জোগায় ঘূর্ণিঝড়কে।