সন্ত্রাসের অভিযোগে বাম, কংগ্রেসের মতো মমতার শপথ অনুষ্ঠান বয়কট করেছিল বিজেপিও। কিন্তু মোদী সরকারের তরফ থেকে শপথে এলেন অরুণ জেটলি এবং বাবুল সুপ্রিয়। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের ক্ষমতায় বসা মমতার সঙ্গে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থেই সংঘাতে যেতে চান না নরেন্দ্র মোদী। সেই বার্তা ইতিমধ্যেই জেটলি, রাজনাথদের দিয়ে রেখেছেন তিনি। ফলে মমতার শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকাটা জেটলিদের কাছে শুধুই শুকনো আনুষ্ঠানিকতা ভাবলে ভুল হবে। বরং কেন্দ্র-রাজ্য সরকারি স্তরে সুসম্পর্ক আর সুসমন্বয়ের মধ্যে দিয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক সমীকরণের দিকটাও খুলে রাখতে চাইছে টিম মোদী। সেই লক্ষ্যে মমতার শপথ অনুষ্ঠানে আলাদা গুরুত্ব দিয়েই হাজির হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা।
কিন্তু রাজনীতি বড় বালাই। এক দিকে যখন সংসদীয় রাজনীতির সংখ্যাগত বাধ্যবাধকতায় মমতাকে দরকার, তখন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক স্বার্থেই মমতা বিরোধিতা জরুরি। তাই আজকের শপথ অনুষ্ঠানে সরকারি তরফে হাজির হয়েছেন বিজেপির মন্ত্রীরা। আবার দলগত ভাবে বয়কটও করেছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির পক্ষে কিছুটা অস্বস্তিকর এই পরিস্থিতি সামাল দিতে আজই আসরে নেমে পড়েন অমিত শাহ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ শেষ হয়েছে কি হয়নি। অমিত শাহরা সবে রেড রোড থেকে বেরিয়েছেন। দিল্লিতে বসে ‘তোপ’ দাগলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। অমিত শাহ বলেন, ‘‘জনমতকে সম্মান করতে সেখানে গিয়েছেন দুই মন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর দায়িত্ব থাকে। যাঁরা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তাঁদের শপথে তাই হাজির থাকা হয়েছে। কিন্তু তাই বলে এই নয়, তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষের পথ ছেড়ে দিয়েছে বিজেপি। যত দিন না পশ্চিমবঙ্গে জিতছি, তত দিন এই সংঘর্ষ জারি থাকবে।’’
বস্তুত, কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই দুমুখো কৌশলে রাজ্য বিজেপি অনেক দিন ধরেই অস্বস্তিতে। রাজ্যসভায় কিছু বিল পাশ করানো কিংবা মোদী-বিরোধী জোট যাতে শক্তিশালী না হয়, তার জন্য বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা মমতার সঙ্গে সংঘাত এড়াতে চাইছেন ঠিকই। কিন্তু রাজ্যে মমতা বিরোধী আন্দোলনে তাতে আঁচ লাগছে। দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে রাজ্য নেতৃত্ব মমতার শপথ বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরে দিল্লিতে অমিত শাহই জানিয়েছিলেন, মমতার শপথে উপস্থিত থাকবেন অরুণ জেটলি। তার পর দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপে কলকাতা থেকে দলের বিক্ষোভ কর্মসূচি সরিয়ে জেলায় নিয়ে যান রাজ্য নেতারা। কিন্তু দলের রাজ্য নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি আরও বেড়েইছে।
সে কথা আঁচ করেই আজ দলের পক্ষ থেকে সভাপতি অমিত শাহ রাজ্য নেতাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। তিনি বুঝিয়ে দিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর দায়িত্ব যতই পালন করুক, রাজনৈতিক ভাবে মমতার সঙ্গে নিরন্তর সংঘর্ষের অবস্থান জারি থাকবে। দলের নেতৃত্ব মনে করেন, এ বারে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে তিনটি আসন পাওয়া বিজেপির কাছে কোনও ছোট ঘটনা নয়। যে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কোনও দিন দাঁত ফোটাতে পারেনি, সেখানে নিজের শক্তিতে তিনটি আসন ভবিষ্যতে ক্ষমতা দখলের প্রথম পদক্ষেপ। সেটিকেই ভিত করে এ বারে লোকসভায় ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আর সেটি হবে মমতা-বিরোধী অবস্থান নিয়েই। দলের এক নেতা বলেন, ‘‘এক সময় মনে করা হত, অসমেও বিজেপি কোনও দিন সরকার গড়তে পারবে না। কিন্তু কয়েকটি নির্বাচনে জমি আঁকড়ে থেকে আজ সেটি সম্ভব হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের দরজা সবে খুলেছে। ভবিষ্যতে ক্ষমতা দখলও অসম্ভব কিছু নয়।’’
আরও পড়ুন...
পূর্ণমন্ত্রী ২৯ জন, ১৩ প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে ৫ জন স্বাধীন দায়িত্বে