তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের দেরি আছে। তবে পূর্ব মেদিনীপুরের মাটিতে তৃণমূল বনাম বিজেপি, বা আরও স্পষ্ট করে কুণাল ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারীর টক্কর জমে উঠেছে। চলছে পরস্পরের শক্তিক্ষয়ের চেষ্টা।
তবে রবিবার হলদিয়ার কর্মসূচি থেকে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল স্পষ্ট করেছেন, যাচাই করে তবেই কাউকে দলে নেওয়া হবে। বিশেষ করে স্থানীয় নেতৃত্বের আপত্তি থাকলে, তা গুরুত্ব পাবে। অন্য দিকে, পটাশপুরে শুভেন্দুর উপস্থিতিতে এ দিন তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি, পঞ্চায়েত সদস্য-সহ জনা দশেক পদ্মের পতাকা ধরেছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, যাঁরা দল বদলাচ্ছেন, তাঁরা হয়তো তেমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব নন। তবে পঞ্চায়েত ভোটে নিচুতলার এই কর্মী-সমর্থকদের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।
তৃণমূলের রাজ্য নেতা কুণাল পূর্ব মেদিনীপুরের বিশেষ দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিজেপিতে প্রথম ধাক্কা লাগে শুভেন্দুর বিধানসভা এলাকা নন্দীগ্রামে। পদ্মের বেশ কিছু পুরনো নেতা-কর্মী দল ভেঙে তৃণমূলে যোগ দেন। তার পরে রবিবার কুণাল গিয়েছিলেন হলদিয়ায়। সেখানে একদা ‘দাদার অনুগামী’ ব্যানারের তলায় থাকা কিছু শুভেন্দু ঘনিষ্ঠের আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগদানের কর্মসূচি ছিল এ দিন। কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের আপত্তিতে তা বাতিল হয়েছে। কুণালের স্পষ্ট বার্তা, ‘‘দলের প্রতি আনুগত্য নিয়ে যদি সন্দেহ থাকে বা স্থানীয় নেতৃত্বের আপত্তি থাকে, তা হলে যথেষ্ট আলাপ-আলোচনা করে তা মিটিয়েই যোগদান প্রক্রিয়া হবে। তার আগে কাউকে যোগ দেওয়ানো হবে না।’’
এ দিন সুতাহাটা বাজারে হলদিয়া শহর তৃণমূলের সভায় কুণাল ছাড়াও মন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী, অখিল গিরি, তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র ছিলেন। সভায় ৭৫ জন ‘দাদার অনুগামী’ তৃণমূলে যোগ দেবেন বলে ঠিক ছিল। তৃণমূল তালিকাও দেয়। কিন্তু কুণালের উপস্থিতিতে যোগদান পর্ব শুরুর মুখেই ওঠে ‘না, না’ রব। প্রবল আপত্তি করতে থাকেন তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। পরিস্থিতি দেখে কুণালের ঘোষণা, ‘‘যোগদান পর্ব আপাতত স্থগিত থাকছে।’’ পরে তিনি জানান, ‘‘অন্য দল থেকে কেউ আসতেই পারেন। কিন্তু তা যাচাই করা হবে। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের, বিশেষ করে যাঁরা শুরু থেকেই তৃণমূল করছেন, তাঁদের মতামত নেওয়া হবে।’’
এই ‘দাদার অনুগামী’রা এক সময় বিজেপিতে ছিলেন। ২০১৯ সালে শুভেন্দুর হাত ধরে তৃণমূলে আসেন। তার পরে শুভেন্দু যখন স্বাধীন কর্মসূচি করছিলেন, তখন এঁরা ‘দাদার অনুগামী’ ব্যানারে পথে নেমেছিলেন। তবে শুভেন্দু বিজেপিতে গেলেও এঁরা আনুষ্ঠানিক দলবদল করেননি। ফলে, এঁদের নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের সন্দেহ ছিলই। এ দিনের সভায় আসা অর্ধেন্দু দাস বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূলই আছি, তৃণমূলেই থাকব। শুভেন্দু অধিকারীর হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা নিয়েছিলাম বলে কিছু মানুষ ভুল বুঝছে। আজকের ঘটনা সবার মনে ব্যথা দিয়েছে।’’ কুণাল অবশ্য বলেছেন, ‘‘স্থানীয় কর্মীদের ক্ষোভ থাকায় আমরা আলোচনা করে পরে আবার এই কর্মসূচি করব। যাঁরা যোগ দিতে এসেছেন, তাঁদের নিরুৎসাহিত হওয়ার কিছু নেই।’’ এ প্রসঙ্গে হলদিয়ার বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডলের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল একটা নাটক মঞ্চস্থ করল। বিজেপির কেউ তৃণমূলে যোগ দিতে যায়নি। সবটাই ওদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পরিণাম।’’
এ দিন চণ্ডীপুরে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীতেও গিয়েছিলেন কুণাল। সেখানে তাঁর আক্রমণের নিশানায় ছিলেন শুভেন্দু। নন্দীগ্রামে দু’দিন আগে দলবদল নিয়ে তাঁর খোঁচা, ‘‘রাত্রে ছুটে যাচ্ছে ওখানে। নন্দীগ্রামে বসে থাকছে, পাহারা দিতে। আমি শুভেন্দুকে বলি, ও শুভেন্দু, ‘ইয়ে ডর হমে আচ্ছা লাগা’।’’
শুভেন্দু এ দিন ছিলেন পটাশপুরের মংলামাড়ো বাজারে বিজেপির সভায়। সেখানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার হাত থেকে পদ্মের পতাকা নেন তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি তাপস মাজি ও তৃণমূলের তিন পঞ্চায়েত সদস্য-সহ দশ জন। শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, ‘‘তাপস মাজিদের নেতৃত্বে আমরা পটাশপুরে তৃণমূলকে উৎখাত করব।’’ তবে এই দলবদল নিয়ে যাতে দ্বন্দ্ব না বাধে, তা-ও নিশ্চিত করতে চেয়েছেন শুভেন্দু। পুরনো কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘নতুনরা কেউ শর্ত দিয়ে বিজেপিতে আসেননি। দলের সাধারণ কর্মী হিসেবেই ওঁরা আপনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে ময়দানে থাকবেন।’’ রাজ্যের ‘দেউলিয়া’ সরকার পুলিশকে দিয়ে জাতীয় সড়কে তোলা তুলছে বলে অভিযোগ করেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, বীরভূমের বহু পঞ্চায়েতেও তৃণমূল প্রার্থী খুঁজে পাবে না।
তৃণমূলের পটাশপুর-১ ব্লক সভাপতি পীযূষ পন্ডার দাবি ‘‘শুভেন্দুর অনুগামী হিসেবে তাপস আগেই বিজেপিতে নাম লিখিয়েছিলেন। এখন আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগদান করলেন। এতে আখেরে তৃণমূলের রাজনৈতিক ভিত শক্ত হল।’’