প্রতীকী ছবি।
শহরে ঢুকলে নজরে পড়বে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য একাধিক সর্বভারতীয় প্রশিক্ষণকেন্দ্রের শাখা, নাম করা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, অজস্র সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান— এমন নানা কারণে গত কয়েকবছর ধরে বিশেষত, দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার পড়ুয়া, অভিভাবকদের গন্তব্য হয়ে উঠছে ‘এডুকেশন হাব’ দুর্গাপুর। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের মতে, রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্সে প্রায় প্রতি বছর দুর্গাপুরের পড়ুয়াদের ফল এই বিষয়টিই প্রমাণ করছে।
এ বার এই শহর থেকে রাজ্য জয়েন্টে দুর্গাপুরের ডিএভি মডেল স্কুলের শুভম ঘোষ দ্বিতীয় ও পূর্ণেন্দু সেন পঞ্চম হয়েছেন। বিশেষ ভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থীদের মধ্যে রাজ্যে জয়েন্টে প্রথম হয়েছেন দুর্গাপুরের ওই স্কুলেরই ছাত্র অবিনাশ প্রসাদ। সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা দুর্গাপুরে গত কয়েকবছর দেখা যাচ্ছে। জয়েন্টের মেধাতালিকার প্রথম দশে দুর্গাপুর থেকে ২০১৪-য় চার জন, ২০১৭ ও ২০১৮-য় এক জন করে, ২০১৯-এ তিন জন পড়ুয়া স্থান পেয়েছিলেন।
সাফল্যের চাবিকাঠি কী? কৃতীরা জানান, দুর্গাপুরে ডিএভি, হেমশিলা-সহ একাধিক বেসরকারি স্কুল রয়েছে। সেখানে পড়ুয়াদের প্রতি ‘বিশেষ’ নজর দেওয়া হয়। পাশাপাশি, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকের মতে, এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্র। এ বারের কৃতী শুভম এবং পূর্ণেন্দুরা তেমনই একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সিটি সেন্টার শাখায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। শুভম ও পূর্ণেন্দু বলেন, ‘‘দুর্গাপুরের এই প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন অনুশীলন করে প্রতিযোগিতার উপযোগী করে তোলে।’’ ওই প্রশিক্ষণকেন্দ্রের আধিকারিক প্রদীপ রাউত জানান, এই অনুশীলনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে জরুরি ‘নির্দিষ্ট পদ্ধতি’ অবলম্বন। তাঁরা পড়ুয়াদের সেটাই অভ্যাস করান।
বিভিন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্র সূত্রে জানা গেল, তাঁদের পড়ুয়ারা মূলত পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার মতো দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে আসেন। ছেলেমেয়েদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ভিন্-জেলা থেকে দুর্গাপুরে এসে ভাড়াবাড়িতেও থাকেন অনেক অভিভাবক। এ বারের পঞ্চম পূর্ণেন্দুই যেমন পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা। তাঁকে নিয়ে মা দীপ্তিদেবী সিটি সেন্টারে ভাড়াবাড়িতে রয়েছেন দু’বছর ধরে। শুক্রবার জয়েন্টের ফলপ্রকাশের পরে তিনি বলেন, ‘‘দুর্গাপুরে ভাল শিক্ষা মিলবে, এই আশা নিয়ে এখানে এসেছি। স্বপ্নপূরণ হল।’’
পাশাপাশি, বিভিন্ন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ম্যানেজমেন্ট, মেডিক্যাল, পলিটেকনিট, আইটিআই, ফার্মাসি, হোটেল ম্যানেজমেন্ট-সহ নানা বিষয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে দুর্গাপুরে। ফলে, শহরে একটি ‘শিক্ষার আবহ’ রয়েছে, মনে করছেন অভিভাবকদের একাংশ। এআইটি, দুর্গাপুরের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক নির্মলকুমার রায়ের মন্তব্য, ‘‘দুর্গাপুর নিঃসন্দেহে ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ নানা শিক্ষার প্রস্তুতি ও পড়াশোনার ক্ষেত্রে রাজ্যের সেরা গন্তব্যগুলির একটি। তাই এখানে আসছেন পড়ুয়া, অভিভাবকেরা।’’
পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ভিন্-জেলা এবং কলেজে পড়াশোনার জন্য রাজ্য এবং ভিন্-রাজ্যের পড়ুয়ারা শহরে আসায় উপকৃত হয় শহরের অর্থনীতিও, মনে করেন ‘দুর্গাপুর সাবার্বান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর সম্পাদক প্রফুল্ল ঘোষ।