Social Identity

চিকিৎসকদের সামাজিক পরিচয় জানাবে না রাজ্য

তথ‍্য জানার অধিকার আইনের ৮ নম্বর শাখার কয়েকটি ধারা উল্লেখ করে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সিনিয়র স্পেশাল সেক্রেটারির জবাবে বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী ব‍্যক্তিগত তথ‍্য প্রকাশ করা যাবে না।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:৩৮
Share:

সামাজিক ন্যায় ও শিক্ষা সংক্রান্ত সমীক্ষায় যুক্ত এক গবেষকের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে রাজ‍্য স্বাস্থ্য দফতর। —প্রতীকী চিত্র।

রাজ্যে সরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক, ডাক্তারদের শিক্ষাগত যোগ‍্যতা বা সামাজিক গোষ্ঠী পরিচয়ের বিন্যাস নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন। অথবা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের বিভিন্ন কমিটিতে মহিলা, তফসিলি, অনগ্রসর শ্রেণি, জনজাতি, সংখ্যালঘু নির্বিশেষে প্রতিনিধিত্বের খুঁটিনাটি জানার আর্জি। তথ‍্য জানার অধিকার আইনের বলে এ সব প্রশ্নের জবাব চেয়ে সামাজিক ন্যায় ও শিক্ষা সংক্রান্ত সমীক্ষায় যুক্ত এক গবেষকের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে রাজ‍্য স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

আরটিআই বা তথ‍্য জানার অধিকার আইনের ৮ নম্বর শাখার কয়েকটি ধারা উল্লেখ করে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সিনিয়র স্পেশাল সেক্রেটারির জবাবে বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী এ সব ব‍্যক্তিগত তথ‍্য প্রকাশ করা যাবে না। এই ধরনের তথ‍্য প্রকাশ, কর্মরত ডাক্তার, শিক্ষক এবং নিয়োগকারীর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ভঙ্গের শামিল বলেও ব্যাখ্যা করা হয়। জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত এই প্রশ্নগুলির জবাব দিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনীহায় এ দেশের তথ‍্য অধিকার কর্মীদের মহল তীব্র ভাবে আলোড়িত হয়েছে।

কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ বলে একটি নাগরিক মঞ্চের অধিকর্তা ভেঙ্কটেশ নায়কের মতে, “এই মৌলিক প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে না চাওয়ার পিছনের যুক্তি হাস‍্যকর! ডাক্তারেরাই অনেকে চেম্বারে ফলাও করে ডিগ্রি লেখেন। রোগীর অবশ‍্যই এটুকু জানার অধিকার রয়েছে। তা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন পিছিয়ে থাকা শ্রেণি, দলিত, সংখ্যালঘুদের মেডিক্যাল কলেজে প্রতিনিধিত্ব জানাটাও জনস্বার্থে জরুরি।” ভেঙ্কটেশের ব্যাখ্যা, আরটিআই আইনের ৮ (১ জে) ধারা অনুযায়ী, জনস্বার্থ জড়িত থাকলে ব‍্যক্তিগত তথ‍্য কথাটা খাটে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আইনের অপব্যাখ্যা করছে। আরটিআই-এর ৪ (১ বি) ধারা মেনে এ সব তথ‍্য ওদের নিজেদেরই দেওয়ার কথা।”

Advertisement

এই বিষয়গুলির প্রশ্নকর্তা সাবির আহমেদ জানাচ্ছেন, গত ডিসেম্বরে পাঠানো প্রশ্নে ২৬টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে ৬টি ঠিকঠাক জবাব দেয়। কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ পাল্টা তাঁকে নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন করে। এই ধরনের মৌলিক প্রশ্নের ক্ষেত্রে যা অনভিপ্রেত বলে মনে করছেন বেশির ভাগ আইনজ্ঞ। বেশির ভাগের কাছে সাড়া না পেয়ে সাবির সংশ্লিষ্ট অ্যাপেলেট অথরিটি তথা স্বাস্থ্য দফতরের সিনিয়র স্পেশাল সেক্রেটারির দ্বারস্থ হলে তিনি প্রশ্নটি কার্যত খারিজ করে দেন। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “এটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। তাঁরা যা বুঝেছেন, করেছেন।” অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিৎ বসু বলেন, “পুরো বিষয়টির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সামাজিক ন্যায় সুনিশ্চিত করার সার্বিক অনীহাই প্রকট। ২০১৪-১৫ সালের পর থেকে এ রাজ্যে সরকারি কর্মীদের জাতিগত সমীক্ষা হয়নি। দেখা গিয়েছে, পিছিয়ে থাকাদের কোটা এখানে কখনওই পূরণ হয় না। সহজ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে সামাজিক ন্যায়ের লড়াইটাই জটিল করা হচ্ছে।” স্বাস্থ্যকর্তাদের
একাংশের মত, সরকারি ওয়েবসাইটেই এ সব তথ‍্য থাকার কথা ছিল। জবাব খুঁজতে সাবির এখন রাজ্যের তথ‍্য কমিশনারের কাছে যাওয়ার তোড়জোড় করছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement