ফাইল চিত্র।
রবিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত ৬১৫৩ জন। পজ়িটিভিটি রেট ১৫.৯৩ শতাংশ। যা শুক্রবারের থেকে গড়ে তিন বেশি। ওই দিন পজ়িটিভিটি রেট ছিল ১২.০২ শতাংশ।
স্বাস্থ্য শিবিরের অনুমান, দৈনিক সংক্রমণ সর্বাধিক ৩৫ হাজারে পৌঁছে যেতে পারে। তার মোকাবিলায় সব দিক থেকে প্রস্তুতি সেরে রাখছে স্বাস্থ্য দফতর। তাদের পর্যবেক্ষণ, এই হারে সংক্রমণ বাড়তে থাকহলে কমবেশি সাত শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হতে পারে।
রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এ দিন জানান, রাজ্যে এখন পর্যাপ্ত কোভিড শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। যত শয্যা রয়েছে, তার মাত্র দেড় শতাংশে রোগী ভর্তি আছেন। তাঁর আবেদন, “অযথা আতঙ্কিত হবেন না।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের ১৯৪টি সরকারি হাসপাতালে মোট ৩২,২৬৮টি শয্যা আছে। চিকিৎসকেরা জানান, এখন যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই উপসর্গ নেই, থাকলেও মৃদু। ওই সব রোগীকে বাড়িতে রাখার কথাই জানান মুখ্যসচিব। তাঁর আশ্বাস, সরকার বাড়িতে থাকা রোগীদের উপরেও নজর রাখবে। যদিও তা কী ভাবে কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরও জানিয়েছে, উপসর্গহীন ও মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগী বাড়িতে থাকবেন। কো-মর্বিডিটি বা অন্য রোগের অনুষঙ্গ থাকা করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। মুখ্যসচিব বলেন, “রাজ্যের কোভিড আক্রান্ত ৯৫ শতাংশের বেশি মানুষেরই উপসর্গ নেই। আপনারা বাড়িতেই সুরক্ষিত থাকুন।” প্রয়োজনে মানুষ সেফ হোমে গিয়েও থাকতে পারবেন বলেও জানান তিনি। শহরে ইতিমধ্যেই তিনটি সেফ হোম চালু করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যসচিব।
প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে মেডিক্যাল কলেজ, জেলা, মহকুমা স্তরের হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল। এ বার সেগুলির পাশাপাশি গ্রামীণ, ব্লক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও করোনা চিকিৎসার বন্দোবস্ত রাখা হচ্ছে। গ্রামে করোনা মোকাবিলার জন্য অন্তত ৫৪ হাজার আশাকর্মী ও ৩৫০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যেই আরও ৪২৫০টি শয্যা বাড়ানো হবে। তখন করোনা চিকিৎসায় সরকারি শয্যা-সংখ্যা হবে প্রায় সাড়ে ৩৬ হাজার। এ ছাড়াও ৭৯টি হাসপাতালে ১১৩১টি হাইব্রিড ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট আগামী এক মাসের মধ্যে তৈরি করা হবে।
করোনার চিকিৎসার জন্য ভেন্টিলেটর, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট, অ্যাম্বুল্যান্সেরও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তৈরি থাকছে কোভিড আক্রান্ত শিশুদের জন্য নিওনেটাল, পেডিয়াট্রিক কেয়ার ইউনিট এবং ভেন্টিলেটর। এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, করোনা রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১০২ নম্বরে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যাচ্ছে। এই মুহূর্তে ১০৮টি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। আরও ৬৯টির ব্যবস্থা হচ্ছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অক্সিজেন সঙ্কটের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ইতিমধ্যেই সব হাসপাতালে নিজস্ব অক্সিজেন ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু হয়েছে। ২৮টির মধ্যে অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানোর কাজ হয়েছে ১৬টি হাসপাতালে। আবার অক্সিজেন লাইন তৈরি হচ্ছে ৭৭টি হাসপাতালে। তার মধ্যে ৬৮টির কাজ শেষ। এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “পরিস্থিতি যে-দিকে এগোচ্ছে, তাতে কবে, কোথায় থামবে, সেটা এখনই নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়। সব থেকে বেশি সংক্রমিত কলকাতা।”
এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী কলকাতায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১৯৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। শহরের বহু সরকারি হাসপাতালের আক্রান্ত হয়েছেন চিকিৎসকেরাও। স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের এক শীর্ষ কর্তা-সহ অন্তত ৭০ জন করোনায় আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে পড়ুয়া-চিকিৎসকও আছেন। চিত্তরঞ্জন সেবা সদনে আক্রান্ত ৩৩ জন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে সাত জন পড়ুয়া-চিকিৎসক আক্রান্ত। বেসরকারি হাসপাতালেও অনেক চিকিৎসক আক্রান্ত। এক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, “বোঝা যাচ্ছে, জনগোষ্ঠীতে করোনা প্রভাব ফেলেছে। আর বেশির ভাগই উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত। হয়তো সেই সব রোগীর সংস্পর্শে আসায় অনেক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।” স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সব আক্রান্তের শারীরিক পরিস্থিতিই স্থিতিশীল।