WB Health Department

স্বাস্থ্যসাথীতে গরমিল ধরতে কৃত্রিম মেধায় ভরসা রাখছে স্বাস্থ্য দফতর

স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে গরমিল ধরতে হাসপাতালে আচমকা পরিদর্শন করা এবং ফোন করে রোগীর থেকে বিস্তারিত তথ্য যাচাই করা হচ্ছিল। তাতেই বিভিন্ন ভুয়ো নথি বেরোচ্ছিল।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:২২
Share:

স্বাস্থ্য ভবন। —ফাইল চিত্র।

প্রতিদিন প্রায় দু’লক্ষ নথি যাচাই করতে হয় স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে। তার মধ্যে থেকে গরমিল চিহ্নিত করাটা কার্যত খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার মতো হয়ে গিয়েছিল কর্মীদের কাছে। তাই এ বার সহজেই এই প্রকল্পে যে কোনও গরমিল ধরতে কৃত্রিম মেধার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই) ব্যবহার শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। ঠিক যেমন আসন্ন লোকসভা ভোটের নজরদারিতে ওই প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন।

Advertisement

এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘কিছু নার্সিংহোম বা বেসরকারি হাসপাতালের পাঠানো স্বাস্থ্যসাথীর নথিতে গরমিল দেখা যাচ্ছিল। এমনকি, ভুয়ো নথিও পাওয়া গিয়েছে। যা জমা করে বিলের টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কর্মী বা যন্ত্রের মাধ্যমে সেগুলি চিহ্নিত করার থেকে অনেক দ্রুত কাজ করবে কৃত্রিম মেধা।’’ জানা যাচ্ছে, ভুয়ো নথি জমা দেওয়ার অপরাধে ২০২২ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৭৪টি বেসরকারি হাসপাতালকে শাস্তি পেতে হয়েছে। প্রায় আট কোটি টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে।

স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে গরমিল ধরতে হাসপাতালে আচমকা পরিদর্শন করা এবং ফোন করে রোগীর থেকে বিস্তারিত তথ্য যাচাই করা হচ্ছিল। তাতেই বিভিন্ন ভুয়ো নথি বেরোচ্ছিল। কিন্তু তার পরেও ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে অনেকে। সেটা বন্ধ করাই প্রধান লক্ষ্য। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যসাথীর বিল বকেয়া রয়েছে, এমন অভিযোগ এখন কেউ করতে পারবেন না। ঠিক সময়ে টাকা প্রদান করা হচ্ছে। তা হলে গরমিল কেন বরদাস্ত করা হবে?’’

Advertisement

সূত্রের খবর, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে দৈনিক ভর্তি, ছুটি এবং বিলের অনুমোদন— এই তিন ক্ষেত্র মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার রোগীর অন্তত ১০টি করে নথি খতিয়ে দেখতে হয়। কী ভাবে তাতে কাজ করবে কৃত্রিম মেধা? স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, লক্ষাধিক নথির মধ্যে অনেক সময়েই প্রেসক্রিপশন, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার কয়েকটি রিপোর্ট হয়তো একই রকমের। সেটি চিহ্নিত করে দেবে এআই। যাতে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কাছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া যায়। আবার অনেক সময়ে দেখা যায়, শল্য চিকিৎসার অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অন্যের ইসিজি রিপোর্ট আপলোড করা হয়েছে। আগের কোন রিপোর্টের সঙ্গে সেটির মিল দেখা যাচ্ছে, তা-ও দেখিয়ে দেবে ওই প্রযুক্তি।

স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নিয়ম অনুযায়ী, অস্ত্রোপচারের তারিখ, সময়, চিকিৎসকের নাম নথিভুক্ত করতে হয় পোর্টালে। সেখানে এক জন চিকিৎসক দৈনিক কতগুলি অস্ত্রোপচার করছেন, এত দিন তার হিসাব রাখতেন কর্মীরা। কিন্তু এখন এআই সেগুলি বিশ্লেষণ করবে। এক কর্তার কথায়, ‘‘ধরা যাক, ডায়মন্ড হারবারে দুপুর ২টোর সময়ে এক জন চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেছেন। ওই একই দিনে দুপুর ৩টের সময়ে বাঁকুড়াতেও তিনি একটি অস্ত্রোপচার করেছেন বলে নথি রয়েছে। এক ঘণ্টার মধ্যে কোনও মতেই ওই দু’টি জায়গায় যাতায়াত সম্ভব নয়। এই অসামঞ্জস্যের দিকটি চিহ্নিত করে দেবে এআই।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এআই ব্যবহার করে প্রাথমিক ভাবে কয়েকটি হাসপাতালে গুগ্‌ল লোকেশন আপলোডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে ভর্তির পরে, অস্ত্রোপচারে যাওয়ার আগে-পরে, শয্যায় আসার পরে ও ছুটির সময়ে রোগীর ছবি তুলে গুগ্‌ল লোকেশন-সহ
আপলোড করতে হবে। সেখানে কোনও অসামঞ্জস্য থাকলে তা সহজেই চিহ্নিত করে দেবে প্রযুক্তি। তাতে রোগী ভর্তি না করে বা অন্যের ছবি ব্যবহার করে বিল করলে তা-ও সহজে ধরে ফেলবে এআই। এক কর্তা বলেন, ‘‘এআই-এর মাধ্যমে গরমিল চিহ্নিত করে ইতিমধ্যেই কিছু হাসপাতালে ইমেল পাঠিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ভুলটি অনিচ্ছাকৃত ধরে নিয়ে প্রথমে সতর্ক করে ঠিক নথি আপলোড করতে বলা হচ্ছে।’’

তিনি আরও বলছেন, ‘‘এটাও মনে রাখতে হবে, বার বার করা অনিচ্ছাকৃত ভুলও কিন্তু একটা সময়ের পরে আর মানা হবে না। কারণ, বিল করে সরকারের থেকে যখন টাকা পাচ্ছে, তখন সেই কাজেও সতর্ক থাকতে হবে।’’ কোন হাসপাতালের কোন ধরনের ভুল কত বার হচ্ছে, তা দেখে লাল, হলুদ ও সবুজ রঙে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বার বার লাল হতে থাকলে কড়া ব্যবস্থারও সংস্থান রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement