রবিবার একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আবারও পুলিশকে তাদের ‘কর্তব্য’ মনে করিয়ে দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। — ফাইল ছবি।
হাওড়ায় অশান্তির ঘটনায় শুক্রবার বিবৃতি দিয়ে পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ করতে বলেছিল রাজভবন। রবিবার একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আবারও পুলিশকে তাদের ‘কর্তব্য’ মনে করিয়ে দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। জানালেন, পুলিশকে ‘নির্ভয়ে, নিরপেক্ষ ভাবে’ তদন্ত করতে হবে। সর্বোপরি, মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। এবিপি আনন্দকে দেওয়া এই টেলিফোন সাক্ষাৎকারে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘পুলিশকে নির্ভয়ে, নিরপেক্ষ ভাবে কর্তব্য করতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। দায়বদ্ধ হতে হবে। দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ করতে হবে।’’ গোটা সাক্ষাৎকারে তিনি বার বার নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। পুলিশকে মানুষের আস্থা অর্জন করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। কোনও ভাবেই তার অন্যথা করা যাবে না।’’
বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার হাওড়া জেলার কিছু এলাকায় অশান্তির পর, শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজ্যপাল তাঁর লিখিত বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘‘পুলিশের উচিত লক্ষ্য স্থির রেখে কড়া এবং স্বচ্ছ পদক্ষেপ করা। অশান্তি তৈরির পিছনে যাঁদের মদত রয়েছে তাঁদের ভয় পেলে চলবে না।’’ তার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রকাশ্যে পুলিশের একাংশের ‘গাফিলতি’-র প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। এমনও জানিয়েছিলেন যে, ‘দোষী’ পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে তিনি প্রশাসনিক স্তরে ব্যবস্থা নেবেন।
হাওড়ার অশান্তির ঘটনায় বিশেষ সেল গঠন করেছে রাজভবন। রাজ্যপাল জানিয়েছেন, যে এলাকায় অশান্তি হয়েছে, সেখানকার পরিস্থিতির উপর নজর রাখতেই এই পদক্ষেপ। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমরা নজর রাখতে চাই, কী হচ্ছে ওই এলাকায়। সে বিষয়ে সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলেছি। তার থেকেও বড় কথা, রাজভবন এই বিষয়গুলিতে নজর রাখছে, যাতে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করা যায়। যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। গত কয়েক দিন কিছু দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই।’’
সরকারের উপর আস্থা নেই, স্বরাষ্ট্র সচিবের রিপোর্টে ভরসা নেই বলেই কি সেল গঠন রাজ্যপালের? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘যে কোনও প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের নজরদারির প্রক্রিয়া থাকে। সত্য খুঁজে বার করার অনেক পথ রয়েছে। রাজ্য সরকার এবং তার শীর্ষ আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে ছিলেন। তাঁদের থেকে পাওয়া তথ্য সাহায্য করবে বলেই মনে করি। তবে রাজভবনের তরফে রিপোর্টের সত্যাসত্য বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন রয়েছে। সেটার দরকার বলেই নতুন সেল তৈরি করা হয়েছে।’’ হাওড়ার হিংসা নিয়ে সরকার যে পদক্ষেপ করেছে, তা নিয়ে কি রাজ্যপাল খুশি? আনন্দ বোসের জবাব, ‘‘এটা কাজ করার সময়, মূল্যায়নের সময় নয়।’’
এ ধরনের অশান্তি রুখতে কী ধরনের পদক্ষেপ করা দরকার, তা-ও জানিয়েছেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘমেয়াদি এবং স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের একাধিক পর্যায় রয়েছে। যেমন তথ্য সংগ্রহ (ইন্টেলিজেন্স) এবং উপযুক্ত পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। কোথাও কিছু ঘটনা ঘটলে দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ করতে হবে। এর পর আসে পুনর্বাসন। মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।’’ হাওড়ার অশান্তির প্রসঙ্গে কথা বললেও, উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলায় অশান্তি নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘‘আমি পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। এখনই জনসমক্ষে মন্তব্য করব না।’’ বাংলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আনন্দ কি সন্তুষ্ট? এই প্রশ্নের জবাবে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘এটা ব্যক্তিগত বিষয় নয়। মানুষ কী ভাবছে সেটাই আসল। মানুষ সন্তুষ্ট হলে আমরা নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকতে পারি। যত ক্ষণ না তা হচ্ছে, আমরা আত্মবিশ্লেষণ করব, ভুল সংশোধন করব। যে কোনও মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে।’’
শনিবার শিলিগুড়িতে গিয়েছেন রাজ্যপাল। জি২০ বৈঠক উপলক্ষে একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতেই তাঁর এই উত্তরবঙ্গ যাত্রা। সেখান থেকেও তিনি যে হাওড়ার পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছেন, রবিবারের বক্তব্য থেকেই তা স্পষ্ট।