অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছাকাছি থাকা ইনিই সেই জাহাঙ্গির খান। ফাইল চিত্র
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার তৃণমূল সভাপতি জাহাঙ্গির খানকে দেওয়া বিশেষ নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নিতে চলেছে রাজ্য সরকার, এমনই খবর নবান্ন সূত্রে। জেলা রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালীদের একজন জাহাঙ্গির অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ নেতা হিসাবেও পরিচিত। জাহাঙ্গির নিজে অবশ্য বলছেন, নিরাপত্তা প্রত্যাহার নিয়ে তিনি এখনও কিছু জানেন না। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, “আমি এমন কিছু জানি না। পুলিশের তরফ থেকে আমাকে এ নিয়ে কিছু জানানো হয়নি।” তবে একই সঙ্গে বলেন, দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তা তিনি মেনে নেবেন।
২০১৪ সালে অভিষেক প্রথমবার লোকসভা নির্বাচনে জিতে সাংসদ হন ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে। এর পর থেকেই জেলার রাজনীতিতে উত্থান জাহাঙ্গিরের। ২০১৮ সালে তৃণমূলের অনেক পুরনো নেতাকে পিছনে ফেলে পঞ্চায়েত সমিতির ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে সভাপতি হন। ফলতা ছাড়িয়ে এখন বজবজ-১ এবং বজবজ-২ পঞ্চায়েত সমিতি এবং বজবজ পুরসভা এলাকাতেও সাংসদের কাজকর্ম দেখভাল করেন তিনি। জাহাঙ্গির ফলতার যুব তৃণমূলেরও সভাপতি। বজবজ বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষকও তিনি। ২০১৯ সাল থেকে তিনি ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পাচ্ছেন নবান্নের সিদ্ধান্তে। এই শ্রেণির নিরাপত্তায় আটজন করে ব্যক্তিগত দেহরক্ষী দেওয়া হয়। যাঁদের মধ্যে এক থেকে দু’জন কম্যান্ডো থাকে।
জাহাঙ্গিরের নিরাপত্তা প্রত্যাহার নিয়ে ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ এখনও মুখ খুলতে রাজি নয়। জেলা পুলিশের এক শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘এখনই কোনও মন্তব্য নয়। তেমন নির্দেশ এলে দেখতে পাবেন।’’ আর জাহাঙ্গির নিজে কিছু জানেন না মন্তব্য করা পরও বলেন, “আমার সিকিউরিটি তো দলের কর্মীরাই। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে। আজ দলের সিদ্ধান্তে পদ পেয়েছি। দল চাইলে সেই পদ নিয়ে নিতে পারে। দলের সিদ্ধান্ত যা হবে তা-ই মেনে নেব।” এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি তৃণমূলের ডায়মন্ড হারবার-যাদবপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী।
২০১৪ সাল থেকে জাহাঙ্গিরের উত্থান শুরু হলেও, এই উত্থান দ্রুততর হয় ২০১৯ থেকে। সে বছর বজবজ-১ পঞ্চায়েত এলাকা থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য শ্রীমন্ত বৈদ্য আচমকা প্রয়াত হন। এর পর ফলতার বাইরেও নতুন ভুমিকায় দেখা যায় জাহাঙ্গিরকে। শ্রীমন্ত ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের পূর্ত ও পরিবহণ স্থায়ী সমিতির কর্মাধক্ষ্য। সঙ্গে সাংসদ অভিষেকের হয়ে বজবজ বিধানসভা এলাকার পরিচর্যার দায়িত্বেও ছিলেন। তাঁর প্রয়াণের পর ফলতা থেকে এনে অভিষেকের নির্দেশেই জাহাঙ্গিরকে বজবজ তৃণমূলের পর্যবেক্ষক করা হয়। এই বছর থেকেই তাঁকে ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দিচ্ছে নবান্ন। সেই নিরাপত্তাই এ বার ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
গত ডিসেম্বরে ডায়মন্ড হারবার লোকসভায় আয়োজিত এমপি কাপের আয়োজনেও বড় ভুমিকা ছিল জাহাঙ্গিরের। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য না হয়েও সেখানে তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল যথেষ্ট। কী কারণে তাঁর নিরাপত্তা সরিয়ে নেওয়ার ভাবনা, এ নিয়ে এখনও স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। যখন তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল, সেই সময়ও যথেষ্ট বিতর্ক দাঁনা বেঁধেছিল।
জাহাঙ্গিরের পাশাপাশি দক্ষিণ ২৪ পরগনার আরও এক বা একাধিক তৃণমূল নেতাকে দেওয়া নিরাপত্তাও ফিরিয়ে নেওয়া হতে পারে বলে নবান্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে।