পুরভোটে তৃণমূলের দ্বিতীয় প্রার্থী তালিকার পাতায় পাতায় রয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সীর স্বাক্ষর ও রাবারস্ট্যাম্প। গ্রাফিক্স - সনৎ সিংহ
সই দিয়েই চিনে নিতে হবে ‘আসল’ প্রার্থিতালিকা! তৃণমূলের প্রার্থিতালিকায় বিভ্রাট কাটাতে এমনই উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। শুক্রবার ভবানীপুরের দলীয় অফিসে প্রার্থিতালিকা সংবাদমাধ্যমকে দেখানো হলেও, তা হাতে দেওয়া হয়নি। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাংবাদিক বৈঠক শেষ হওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ১০৭টি পুরসভায় প্রার্থিতালিকা দলীয় নেটমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এরপরেই ঘটে বিভ্রাট, তড়িঘড়ি সংবাদমাধ্যমে পার্থ জানিয়ে দেন, এআইটিসি-র সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত তালিকা সঠিক নয়, কারণ সেগুলিতে কোনও সই নেই। শনিবার আবার একধাপ এগিয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘প্রার্থিতালিকা প্রকাশে পাসওয়ার্ডের অপব্যবহার করা হয়েছে।’’
স্পষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করা না হলেও, ইঙ্গিত করা হয় তৃণমূলের পরামর্শদাতা তথা ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাকের বিরুদ্ধে। তবে শনিবার প্রশান্তর সংস্থা সূত্রে দাবি করা হয়, রাজ্যে পুরভোটের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্কই নেই। ওই পুরভোটের জন্য প্রকাশিত কোনও প্রার্থিতালিকার সঙ্গে তারা জড়িত নয়। তবে সংস্থার তরফে সরকারি বা আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও দাবি ওই মর্মে করা হয়নি। কিন্তু তার আগে শুক্রবার রাতেই ‘সঠিক’ তালিকা পাঠানোর কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। এ ক্ষেত্রে একসঙ্গে তালিকা না পাঠিয়ে পৃথক ভাবে প্রত্যেক জেলাভিত্তিক তালিকা পাঠানের সিদ্ধান্ত নেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। দ্বিতীয় বার পাঠানো তালিকার প্রতিটি পাতায় দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত ও বক্সী ও মহাসচিবের স্বাক্ষর করার সঙ্গে দলীয় রাবারস্ট্যাম্প লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতোই প্রত্যেক জেলার পৃথক তালিকা তৈরি করে স্বাক্ষর করেন পার্থ-বক্সী, লাগানো হয় দলের রাবারস্ট্যাম্প। সূত্রের খবর, তালিকা পাঠানোর আগে কোনও জায়গায় সইসাবুদ বাদ রয়েছে কিনা, তা বার বার দেখে নেওয়া হয়। সঙ্গে প্রত্যেক জেলা সভাপতিকে রাজ্য নেতৃত্ব ফোন করে জানিয়ে দেন দলীয় নির্দেশের কথা। দলের দুই শীর্ষ নেতার স্বাক্ষর করা তালিকাই যে স্বীকৃতি তালিকা, তা-ও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেই সূত্রের খবর।
প্রথম তালিকার সঙ্গে দ্বিতীয় তালিকার খুব বেশি পার্থক্য চোখে না পড়লেও, বেশকিছু পুরসভায় অনেক প্রার্থী বদল করা হয়। বারাসত পুরসভায় দ্বিতীয় তালিকায় আটজন প্রার্থী বদল হয়েছে বলে খবর। আবার গুসকরা পুরসভায় প্রথম তালিকায় টিকিট পাওয়া চারজনকে বদল করা হয় দ্বিতীয় তালিকায়। রবিবারও প্রার্থিতালিকা ও নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ বিক্ষোভ নিয়ে বৈঠক করেছেন পার্থ-বক্সী। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে স্থির হয়েছে, ক্ষোভ-বিক্ষোভের কারণে কোথাও প্রার্থী বদল করা হবে না। তবে সংরক্ষিত কিছু আসনে প্রার্থী নিয়ে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে।তাই জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে সেইসব পুরসভায় নতুন করে প্রার্থীদের নাম হতে পারে বলেই সূত্রের খবর। দক্ষিণবঙ্গের এক জেলা সভাপতির কথায়, ‘‘আমাদের দল যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে সেভাবেই আমরা পুরভোট পরিচালনা করব। তাই প্রার্থিতালিকার ক্ষেত্রেও শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশই আমাদের কাছে শেষ কথা।’’