প্রতীকী ছবি।
প্রথম দফার ভোটের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে জোটের মধ্যে জট আরও পাকিয়ে গেল কংগ্রেসের পদক্ষেপে!
পুরুলিয়ার কাশীপুর কেন্দ্রের জন্য কংগ্রেস প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল এআইসিসি। ওই আসনে আগেই মল্লিকা মাহাতোকে প্রার্থী করেছে সিপিএম। পুরুলিয়া জেলারই জয়পুর আসন বামেদের ছাড়ার পরে সেখানে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী করেছে প্রাক্তন বিধায়ক ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতোকে। কিন্তু সেখানেও ফনীভূষণ মাহাতোকে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা করিয়েছেন নেপাল মাহাতোরা। ক্ষুব্ধ ফ ব-ও নেপালবাবুর বাঘমুণ্ডি আসনে প্রার্থী দিয়ে রেখেছে। তার ফলে, মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় ফুরনোর আগে কোনও এক পক্ষ পিছু না হঠলে জোটের যাত্রা প্রথমেই ধাক্কা খেতে পারে।
কংগ্রেসের ‘নাটকীয়তা’র অবশ্য এখানেই শেষ নয়। এআইসিসি-র তরফে মঙ্গলবার ঘোষিত তালিকায় কাশীপুরের প্রার্থী হিসেবে নাম রয়েছে বলরাম মাহাতোর। কিন্তু মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি সুভাষ মাহাতো! তাঁর দাবি, ‘‘দলের নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত।’’ বলরামবাবুরও বক্তব্য, প্রার্থী সুভাষই, তিনি নন। কংগ্রেস যেখানে ছেড়ে দেওয়া আসন ফের দাবি করছে, সংযুক্ত মোর্চার অন্য শরিক ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) সেখানে প্রথম পর্বে অন্তত অন্য পথে হাঁটছে। তাদের জন্য ছেড়ে দেওয়া পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ও বাঁকুড়ার শালতোড়া আসনে উপযুক্ত প্রার্থী না পেয়ে তারা দ্বারস্থ হয়েছিল সিপিএমের। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বার্তা পেয়ে রঘুনাথপুরে সিপিএমের গণেশ বাউড়ি এবং শালতোড়ায় নন্দদুলাল বাউড়ি শেষ দিনে মনোনয়ন জমা দিয়ে দিয়েছেন। পরিবর্তে অন্য জায়গায় আইএসএফ-কে আসন দেওয়া হবে। নন্দীগ্রাম ও দাসপুরে অবশ্য সিপিএমই লড়বে বলে ঠিক হয়েছে।
আসন নিয়ে জটের প্রেক্ষিতে প্রশ্নের জবাবে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস আমাদের বলেছিল, কাশীপুর তারা লড়বে না। সেইমতোই আমরা প্রার্থী দিয়েছিলাম। এখন কংগ্রেস আবার প্রার্থী দিয়েছে। আলোচনা করে এর নিষ্পত্তি করতে হবে।’’ বিমানবাবুর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘কোনও এক আসনে মোর্চার তরফে একাধিক পক্ষের প্রার্থী কোনও ভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে আজ, বুধবার আসনের জট নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। তার পরে দু-এক দিনের মধ্যেই অন্তত তৃতীয় ও চতুর্থ পর্বের ভোটের জন্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিতে চায় বামেরা।
দিল্লিতে এআইসিসি-রও পরবর্তী দফার স্ক্রিনিং কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা আজ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, প্রাক্তন সাংসদ দীপা দাশমুন্সি এবং এআইসিসি নেতারা এ দিন দিল্লিতে তালিকা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়েছেন। আসনের জট প্রসঙ্গে মান্নান বলেন, ‘‘কিছু আসন এখনও রদবদল করা নিয়ে সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে কথা চলছে। আলোচনা করেই আসন-রফার সিদ্ধান্ত হবে।’’ সূত্রের খবর, পুরুলিয়ার কাশীপুরে সিপিএম প্রার্থী প্রত্যাহার করলে কংগ্রেসকে জয়পুরের দাবি তুলে নেওয়ার কথা বলতে পারেন বিমানবাবুরা।
হুগলি জেলার রাজহাটি ভীমতলা থেকে খানাকুল-১ ব্লক মোড় পর্যন্ত এ দিনই ‘মহামিছিল’ ছিল সংযুক্ত মোর্চার। সেখানে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মিছিলে ছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘দশ বছর পরে খানাকুলের এমন মিছিল প্রমাণ করল আমাদের সহজে দমিয়ে রাখা যায় না। আমরা রক্তবীজের ঝাড়!’’ তাঁর বক্তব্য, রাজ্যে বিজেপির ‘বিপদ’কে ঠেকাতে হবে এবং সেই বিজেপিরই ‘সাপ্লাই লাইন’ হয়ে উঠেছে তৃণমূল। দুই শক্তিকেই পরাস্ত করার ডাক দেওয়া হয় মিছিল শেষে সভা থেকে। খানাকুল আসনটি প্রথমে সিপিএম লড়ার কথা বললেও এখন তা কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।