—গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
আপনি কি ডিজিটাল প্রচারে পারদর্শী? সঞ্চালনায় ঝোঁক রয়েছে? নানাবিধ সমাজমাধ্যমে আপনার অবাধ বিচরণ? অফিসের কাজকর্ম ভাল পারেন? মাঠে-ময়দানে নেমে প্রতিবেদন তৈরি করার প্রতিভাও রয়েছে? তা হলে আপনার সামনে একটি সুযোগ রয়েছে ‘কাজ’-এর। তবে সে ‘কাজ’কে পেশা হিসাবে নিলে হবে না। ‘নেশা’ হিসাবে নিলে তবেই ছিঁড়বে শিকে। এই মর্মেই এ বার লিঙ্কড ইনে প্রোফাইল খুলে বিজ্ঞাপন দিল রাজ্য সিপিএম। যা অনেকের মতে, বঙ্গ সিপিএমের কর্পোরেট মোড়ক! প্রত্যাশিত ভাবেই যে বিজ্ঞাপন নিয়ে সিপিএমকে কটাক্ষ করেছে দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তৃণমূল এবং বিজেপি।
লিঙ্কড ইন হল সেই মাধ্যম, যেখানে কোনও সংস্থা তাদের চাহিদার কথা জানিয়ে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। আবার অনেকে তাঁর নিজের জীবনপঞ্জি দিয়ে বিভিন্ন সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেখানে অনুপ্রবেশ ঘটল সিপিএমের। উদ্দেশ্য, ডিজিটাল সৈন্য নিয়োগ।
সোমবার রাজ্য সিপিএমের তরফে সমাজমাধ্যম লিঙ্কড ইনে একটি প্রোফাইল খোলা হয়েছে। সেখানেই ডিজিটাল প্রচারে ‘সৈন্য’ চেয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। তবে যাঁরা সেই ‘কাজের’ জন্য আবেদন করবেন, তাঁদের প্রাথমিক যোগ্যতা হতে হবে সিপিএম অথবা বাম মনস্কতা। বিজ্ঞাপনে সিপিএম এ-ও বলে দিয়েছে, ‘‘কখনওই এটাকে চাকরি হিসাবে ভাববেন না।’’ অর্থাৎ স্বেচ্ছাশ্রম।
সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘বামমনস্ক তরুণ-তরুণীদের আরও বেশি করে দলের পরিসরে পেতেই এই উদ্যোগ। সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে সেই কাজ চলছে। নতুন মাধ্যম হিসাবে লিঙ্কড ইনকেও আমাদের সমাজমাধ্যমের টিম ব্যবহার করতে চেয়েছে।’’ তবে তৃণমূল এবং বিজেপি সিপিএমের এই বিজ্ঞাপনকে লোকের অভাব হিসাবেই দেখছে। তৃণমূলের তরফে সমাজমাধ্যমের কাজকর্ম দেখাশোনা করেন দেবাংশু ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘সিপিএমের লোকের অভাব রয়েছে বলেই ওরা লিঙ্কড ইনে প্রোফাইল খুলে লোক চাইছে। আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা উল্টো। আমাদের এত লোক রয়েছেন, যে তাঁদের সবাইকে জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না।’’ দেবাংশু এ-ও জানিয়েছেন, লিঙ্কড ইনে প্রোফাইল খোলার কোনও পরিকল্পনা তৃণমূলের নেই। রাজ্য বিজেপির তরফে সমাজমাধ্যমের দায়িত্বে এসেছেন সপ্তর্ষি চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরাই এই কাজে এগিয়ে আসেন। ফলে ভাড়াটে সৈন্যের কোনও প্রয়োজন আমাদের নেই।’’ যদিও সর্বভারতীয় বিজেপির একটি প্রোফাইল লিঙ্কড ইনে রয়েছে।
কয়েক বছর আগেও সিপিএমের একটি বড় অংশের মধ্যে সামাজিক মাধ্যম নিয়ে ছুঁতমার্গ ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে তা কেটেছে বলেই অভিমত অনেক নেতার। রাজ্য কেন্দ্রে সমাজমাধ্যমের বিভিন্ন পরিসরে যে টিম কাজ করে, তাদের ভূমিকা নিয়েও খুশি আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সম্প্রতি রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশনের খসড়া প্রতিবেদনেও তার উল্লেখ করেছিলেন সেলিমেরা। কিন্তু তারই পাশাপাশি দলের মধ্যে একটি অংশের সমাজমাধ্যমে ‘আসক্তি’ নিয়েও চিন্তিত নেতাদের অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, এঁরা বুথের কাজ না করে সারা দিন ফেসবুকেই ‘বিপ্লব’ করেন! সিপিএমের নেতাদের অনেকেই ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, অনেক এমন তরুণ-তরুণী রয়েছেন, যাঁরা হয়তো তাঁদের পেশার কারণে ভিন্রাজ্যে রয়েছেন। তাঁরা চান নেপথ্যে থেকে কাজ করতে। তাঁদেরই ব্যবহার করতে চাইছে দল। সেই জন্যই লিঙ্কড ইনে প্রোফাইল খোলা। এখন দেখার, লিঙ্কড ইনের প্রোফাইল খুলে রাজ্য সিপিএম আদৌ আমজনতার সঙ্গে কোনও ‘লিঙ্ক’ (সংযোগ) তৈরি করতে পারে কি না!