বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
‘এক দেশ এক ভোট’-এর আদলে নতুন আইন এনে সব রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এমনটাই অভিযোগ করলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে এসেছিলেন তিনি। সেখানেই তাঁর সাম্প্রতিক দিল্লি সফর নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। গত সোম এবং মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে স্পিকার সম্মেলনে যোগদান করতে গিয়েছিলেন বিমান। সেই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘‘আমি অল ইন্ডিয়া স্পিকার সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে লোকসভার স্পিকার ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান ভোট’-এর মতো একটি আইন আনার প্রস্তাব রেখেছেন। আমাদের পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় যারা রয়েছে, সেই জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের কেন্দ্রীয় ভাবে একটি সংস্থার অধীনে আনতে চায় কেন্দ্র। যার মাধ্যমে কেন্দ্র সরাসরি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবে।’’ বিমান আরও বলেন, ‘‘ওরা যে সব এজেন্ডা ঠিক করে দেবে, তা মেনে কাজ করতে হবে। আমি এই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছি। আমি বলেছি এই সংক্রান্ত বিষয়ের রুল কোথায় রয়েছে? আমি আরও বলেছি যে, আপনি যে কথা বলছেন, তার সামঞ্জস্য বা বাস্তবতা কোথায়?’’
আশঙ্কা প্রকাশ করে স্পিকার যোগ করেন, ‘‘আমার যেটা মনে হচ্ছে, আস্তে আস্তে ওরা রাজ্যের উপর সব বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। আমাদের রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা যে রকম সুন্দর ভাবে চলছে, ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত যে ভাবে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে, তা অভাবনীয়। অন্য কোনও রাজ্যে এমনটা হয় বলে আমার মনে হয় না।’’ সঙ্গে জুড়ে দেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক গোপন অভিসন্ধি রয়েছে। সেগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। সেই দিনের আলোচনা থেকে আমার তেমনটাই মনে হয়েছে। ওরা চাইছে আমাদের রাজ্যের উপর প্রভাব বিস্তার করতে। রাজ্যের হাতে যে সব সংস্থা রয়েছে, সেগুলো এখন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যেতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’’
উদাহরণ দিয়ে বিমান বলেন, বিধানসভার স্থায়ী কমিটির কাজে তিনি হস্তক্ষেপ করেন না। স্বশাসিত সংস্থা হিসাবে তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করেন না বলে মন্তব্য করে বিমান কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করেছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। ‘এক দেশ এক ভোট’-এর প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। তবে এই বিষয়টি কার্যকর করতে এখনও সময় লাগবে বলেই মনে করছে প্রশাসন। স্পিকারের আশঙ্কা, যে ভাবে বিরোধীদের অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করে ন্যায় সংহিতা বিল পাশ করিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার, পঞ্চায়েত তথা অন্য বিষয়গুলির উপর নিয়ন্ত্রণ করতে সংসদে আইন প্রণয়ন করতে একই পথে হাঁটতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।