সোমবার বিধানসভায় ভোটাভুটিতে পাশ হয়ে গেল ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যালায়ে়ড-মেডিক্যাল অ্যান্ড প্যারা মেডিক্যাল কাউন্সিল বিল, ২০১৫’। বিরোধীদের নানা আপত্তি সত্ত্বেও। যে ভাবে চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন দেয় রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল, ঠিক সেই ধাঁচেই প্যারা মেডিক্যাল পেশাদারদের স্বীকৃতি দেবে এই কাউন্সিল।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, অপটোমেট্রিস্ট, ইসিজি টেকনিশিয়ান, ডায়ালিসিস টেকনিশিয়ান, ফিজিওথেরাপিস্ট, ডায়েটিশিয়ান, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট-এর মতো মোট ২৪টি পেশার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের প্রশিক্ষণ ও কাজের মান খতিয়ে দেখবে কাউন্সিল। কাউন্সিলের দেওয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছাড়া রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি কোনও প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন না ওই পেশাদারেরা।
তবে পেশ হওয়ার আগে থেকেই এই বিলটিকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, যে ভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রায় সর্ব স্তরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করছে সরকার, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে ভাবে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন তৃণমূলের কিছু নেতা, ঠিক সে ভাবেই প্যারা মেডিক্যাল পেশাতেও নিজেদের দখলদারি অব্যাহত রাখার চেষ্টা চলবে।
পাশাপাশি বিরোধীদের দাবি, বিলটি একেবারে শেষ মুহূর্তে তাঁরা হাতে পেয়েছেন। চটজলদি এ ভাবে সিদ্ধান্ত না নিয়ে সেটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁরা।
সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা যা বলছি, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কথা ভেবেই বলছি। তাড়াহুড়ো করলে সিঙ্গুর আইন, বিধান পরিষদ আইনের মতো ঠকতে হবে। এই বিলে অনেক জটিল বিষয় আছে। আরও আলোচনা করা প্রয়োজন।’’ সিপিএমের এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যও। পাশাপাশি প্রস্তাবিত কাউন্সিলে যে ভাবে সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকছে, তাতে নির্মল মাজিদের মতো শাসক দলের নেতারা ছড়ি ঘোরাবেন বলেও অভিযোগ করেন সিপিএম বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়।
এ দিন বিলটি পেশ হওয়ার আগেই অধিবেশন ওয়াকআউট করে কংগ্রেস। বাইরে দলের মুখ্য সচেতক মহম্মদ সোহরাব বলেন, ‘‘আমরা আগেই বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম। সরকার মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু এ দিন সকালে ডিএ কমিটির বৈঠকে হঠাৎই বিল পেশের কথা বলা হয়। আমরা আপত্তি জানালেও শোনা হয়নি।’’
যদিও স্পিকার বিধানসভায় জানান, অতীতেও এ ধরনের অনেক বিলই এ ভাবে পেশ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য কটাক্ষ করেন, ‘‘আনিসুরবাবুরা ঠিকমতো বিলটি পড়ার সময় পাননি। ঢিল কুড়োতে ব্যস্ত ছিলেন। ওঁরা যা যা বিষয় তুলেছেন, সে সবই বিলে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে।’’ চন্দ্রিমা জানিয়েছেন, প্যারা মেডিক্যালে যাঁরা কাজ করেন, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যই এই নতুন বিল। তিনি বলেন, ‘‘ইউপিএ সরকার ২০০৭ সালে এই ধরনের একটি বিল আনার পরে সেটি সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যায়।
তার পরে আর বিলটি পেশ হয়নি। কেন্দ্রে নতুন সরকার আসার পরেও তারা বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয়নি। বাধ্য হয়েই এ রাজ্যের কথা ভেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগী হয়েছেন। এ বার রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকতে পারবেন প্যারা মেডিক্যাল পেশাদাররা।’’
কী ভাবে রেজিস্ট্রেশন পাওয়া যাবে কাউন্সিল থেকে? স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশে ওই ২৪টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এমন কিছু স্বীকৃত সংস্থার তালিকা তৈরি হয়েছে। ওই তালিকা এবং বেলেঘাটার ‘স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি’ অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে যাঁরা পাশ করবেন, একমাত্র তাঁরাই ওই কাউন্সিল থেকে রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাবেন। অন্য কোনও রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে কাজ করতে এলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কাউন্সিলের একটি বিশেষ প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করতে হবে।