West Bengal News

বাড়ি গিয়েও দিলীপের দেখা পেলেন না দেবশ্রী, যোগদানের পথে কাঁটা যথেষ্টই, ইঙ্গিত স্পষ্ট

বিজেপিতে শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগদানের দিনেই আচমকা নয়াদিল্লির বিজেপি সদর দফতরে হাজির হয়েছিলেন অভিনেত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৯ ২০:২৭
Share:

তাঁর বিজেপিতে যোগদানের পথে কাঁটা এখনও যথেষ্টই। —ফাইল চিত্র

ঝুলে রয়েছেন তিনি ত্রিশঙ্কু দশায়। আম ও ছালা, দুই-ই যাওয়ার পথে। মরিয়া চেষ্টা অন্তত একটা কূল বাঁচিয়ে নেওয়ার। কিন্তু রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়কের ‘পদ্মদিঘি’ পৌঁছনোর পথে কাঁটা এখনও যে যথেষ্টই, তা আবার স্পষ্ট হয়ে গেল বুধবার রাতে। দেবশ্রী রায় সটান হাজির হয়ে গেলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের বাড়িতে। অবশ্য দীর্ঘ অপেক্ষা সত্ত্বেও দেখা করতে পারলেন না। তার পরে বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে দেবশ্রীকে দলে নেওয়ার কথা বলেও দিলীপ ঘোষ বুঝিয়ে দিলেন, ‘সবার মত’ নেওয়া জরুরি।

Advertisement

বিজেপিতে শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগদানের দিনেই আচমকা নয়াদিল্লির বিজেপি সদর দফতরে হাজির হয়েছিলেন অভিনেত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়। কিন্তু দেবশ্রীকে দলে নেওয়া হলে শোভন-বৈশাখীর যোগদান যে আটকে যাবে, তা সে দিন বেশ বুঝতে পেরেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। ফলে দেবশ্রীকে যোগদান না করিয়েই ফেরত পাঠানো হয়। শোভন-বৈশাখীকে দলে স্বাগত জানানো হয়। আর দলের পতাকা আনুষ্ঠানিক ভাবে হাতে তুলে নেওয়ার পরে বিজেপির কার্যকরী সভাপতি জে পি নাড্ডাকে শোভনরা জানিয়ে আসেন, দেবশ্রীকে দলে যে দিন নেওয়া হবে, সে দিনই তাঁরা দল থেকে ইস্তফা দেবেন।

এখানেই ইতি পড়তে পারত দেবশ্রী পর্বে। কিন্তু পড়েনি। বরং ধোঁয়াশা বেড়েছে দিন দিন। ক্রমাগত নতুন নতুন মোড়ও নিতে থেকেছে ঘটনাপ্রবাহ।

Advertisement

তৃণমূলের এক জন বিধায়ক আচমকা দিল্লি গিয়ে বিজেপির সদর দফতরে হাজির হলেন এবং সেই দলে যোগদানের চেষ্টা করলেন অথচ তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করলেন না। এমনকি শো-কজও করলেন না। কারণ কী? সর্বাগ্রে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল এই প্রশ্নকে ঘিরেই।

আরও পড়ুন: জঙ্গি ঢোকানোর চেষ্টা না করে প্রতিবেশীর মতো আচরণ করুন, পাকিস্তানকে তোপ বিদেশমন্ত্রকের

তার সঙ্গেই উঠে এসেছিল বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দেবশ্রী রায়ের যোগাযোগের সেতু সংক্রান্ত প্রশ্ন। দেবশ্রী বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন, এমন কোনও জল্পনাই ছিল না ১৪ অগস্টের আগে। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ যদি না হয়ে থাকে, তা হলে সরাসরি নয়াদিল্লির বিজেপি দফতরে ঢুকে পড়া তাঁর পক্ষে সহজ ছিল না। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে কে দেবশ্রীর যোগাযোগ করিয়েছিলেন সর্বভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে? সে প্রশ্ন ঘিরেও ধোঁয়াশা বহাল থেকেছে।

এ সবের মধ্যেই বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের তরফে একাধিক বার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, দেবশ্রী রায়কে দলে স্বাগত জানাতে মুরলীধর সেন লেনের কোনও আপত্তি নেই।

এত রকম চর্চা এবং ইঙ্গিত-পাল্টা ইঙ্গিতের জেরে দেবশ্রীর বিজেপিতে যোগদানের সম্ভাবনা সংক্রান্ত চর্চা জিইয়ে থেকেছে গত দু’সপ্তাহ ধরে। বুধবার রাতে জল্পনা আরও বাড়িয়ে দেন দেবশ্রী নিজে। ১৪ অগস্ট বিজেপিতে যোগদানের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরে আর কিছুতেই মিডিয়ার মুখোমুখি হচ্ছিলেন না তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়। কিন্তু ২৮ অগস্ট রাতে তিনি দিলীপ ঘোষের সল্টলেকের বাসভবনে হাজির হতেই ফের দলবদলের জল্পনা দাবানলের মতো ছড়াতে থাকে।

দেবশ্রী প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ আগেই বলেছিলেন, ‘‘আমরা বাজার করে রাখি অনেক কিছুই, সব একসঙ্গে রান্না করি না। ফ্রিজে রাখা থাকে।’’ আর যে দিন দেবশ্রী তাঁর বাসভবনে হাজির হলেন, তার পরের দিনের সাংবাদিক বৈঠকে দিলীপ ফের বললেন যে, দেবশ্রী রায়ের জন্য দলের দরজা খোলা।

আরও পড়ুন: জল্পনা বাড়িয়ে এক মাসে দু’বার বাংলা সফরে সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত

কিন্তু দেবশ্রীর পথটা যে মসৃণ নয়, তা-ও দিলীপের কথাতেই এ দিন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দেবশ্রী রায়কে এ দিন ‘বড় মাপের’ নাম হিসেবেই আখ্যা দিয়েছেন দিলীপ। এই স্তরের রাজনীতিকরা যদি অন্য দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিতে চান, তা হলে অবশ্যই স্বাগত জানানো হবে— এই বার্তাও দিলীপ দেন। কিন্তু তার সঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি এ-ও জানান যে, দেবশ্রী রায়কে দলে নেওয়ার ব্যাপারে ‘সবার মত নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’। সবার মত যে এখনও নেই এবং দেবশ্রীর বিষয়ে ঐকমত্য হওয়াটা যে জরুরি, সে কথা বেশ স্পষ্ট দিলীপের মন্তব্যে।

১৪ অগস্ট বিজেপিতে যোগদানের সময় বিজেপির সর্বভারতীয় কার্যকরী সভাপতি জে পি নাড্ডার কাছে দেবশ্রীর বিষয়ে নিজের আপত্তির কথা কিন্তু শোভন স্পষ্ট করেই জানিয়ে এসেছিলেন। দেবশ্রীকে নেওয়া হবে না, এ রকম আশ্বাসও শোভনরা পেয়েছিলেন সর্বভারতীয় নেতৃত্বের কাছ থেকেই। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ এখন যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে সেই আশ্বাস বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কতটা রাখতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে। তা হলে কি বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের ইচ্ছার সামনে নতি স্বীকার করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও? উঠছে সে প্রশ্নও।

দিলীপ ঘোষ মুখে যা-ই বলুন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সবুজ সঙ্কেত না পাওয়া পর্যন্ত দেবশ্রীর বিষয়ে পুরোপুরি এগোতে যে তিনিও চাইছেন না, তা বুধবার রাতের ঘটনাতেই স্পষ্ট। প্রায় ৪০ মিনিট দেবশ্রী বসে থেকেছেন দিলীপের বাড়িতে। কিন্তু দিলীপের দেখা পাননি। পরে দিলীপের সঙ্গে দেবশ্রীর ফোনে কথা হয়। দিলীপ নিজেও এ দিন সেই কথোপকথনের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘‘শুনছি উনি আমার বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁকে দেখিনি। পরে ফোনে কথা বলেছি।’’

ঘটনাপ্রবাহে অদ্ভুত এক সমাপতনও কিন্তু ঘটেছে বুধবার। বঙ্গ বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন বুধবার রাতে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়েছিলেন। সেখানে বেশ কিছু ক্ষণ শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। অন্য দিকে, প্রায় কাছাকাছি সময়েই দিলীপ ঘোষের বাড়িতে হাজির হয়ে যান দেবশ্রী।

মেননের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে এ দিন শোভন বলেন, ‘‘সাংগঠনিক আলোচনা হয়েছে। কী ভাবে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে তোলা যায়, তা নিয়ে কথা হয়েছে।’’ সে আলোচনায় কি দেবশ্রী রায় সংক্রান্ত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি? শোভন জানান, ও সব বিষয় নিয়ে কথাই হয়নি, তাই ক্ষোভ-বিক্ষোভের প্রশ্নই ওঠে না। দেবশ্রীকে নিয়ে যা বলার, তা তিনি আগেই নেতৃত্বকে বলে দিয়েছেন বলেও কলকাতার প্রাক্তন মেয়র মন্তব্য করেন।

বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন প্রায় একই সুরে জানান, দেবশ্রী রায়কে নিয়ে সব জায়গায় কথা বলার প্রয়োজন তিনি বোধ করেন না, কারণ দেবশ্রীকে তিনি অত গুরুত্বই দেন না। কিন্তু দেবশ্রী প্রথমে বিজেপির সর্বভারতীয় সদর দফতরে পৌঁছে গেলেন। এ বার রাজ্য সভাপতির বাড়িতেও হাজির হয়ে গেলেন। এ নিয়েও কি কিছু বলবেন না? মন্তব্য এড়িয়ে বৈশাখী বলেন, ‘‘কেউ যদি রাজনৈতিক পর্যটন করতে চান, করবেন। তাতে আমার কিছু বলার নেই।’’ দেবশ্রীর সঙ্গে দিলীপ ঘোষ দেখা করবেন কি না, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত দিলীপ ঘোষই নেবেন— মন্তব্য বৈশাখীর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement