প্রতীকী ছবি।
গত বছরের ‘মনোভাব’ এ বছর চলবে না, সেই বার্তা আগেই দিয়েছে নবান্ন। প্রকল্প শেষ করার সময়সীমাও কমে আসছে। তাই যে ভাবেই হোক ‘জট’ কাটিয়ে বাড়ি-বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছনোর কাজে বিগত বছরের ঘাটতি মিটিয়ে গতি বাড়ানোর নির্দেশ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে দিয়েছে নবান্নের শীর্ষমহল। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন্দ্রের ‘জল জীবন মিশন’-এর আওতায় ২০২৪ সালের মধ্যে পুরো দেশে এই কাজ শেষ করার কথা। এ রাজ্যে ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পের অধীনে এই কাজ গত বছর শুরু হয়েছে। পাঁচ বছরের মধ্যে রাজ্যের প্রায় ১ কোটি ৬৩ লক্ষ পরিবারে নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, গত বছর ৫৫ লক্ষ পরিবারে জল সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রায় ১৫ লক্ষ পরিবারকে তা দেওয়া গিয়েছে। তাই বরাদ্দ অর্থের অনেকটাই অব্যবহৃত থেকে যায়। এই গতিতে চললে লক্ষ্যপূরণ কার্যত অসম্ভব তা বুঝেই এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে এবং কাজে গতি আনার কথা বলা হয়েছে।
দফতরের অন্দরের দাবি, বিগত বছরে প্রকল্পের গতি ছিল মাত্র ১.২ শতাংশ। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম চার মাসে ১.৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ৩ লক্ষ ২৯ হাজার পরিবারে জলের সংযোগ দেওয়া গিয়েছে। এখন মাসে প্রায় ১ লক্ষের কাছাকাছি পরিবারে জলের সংযোগ করার কাজ চলছে। এ বছর প্রায় ১ কোটি পরিবারকে জলের সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু বিরোধী মহলে প্রশ্ন উঠছে, প্রকল্পের গতি বাড়ানো যদি সম্ভবই ছিল, তা হলে গত বছর থেকেই তা কেন করা হল না?
দফতরের মন্ত্রী পুলক রায়ের কথায়, “কোভিডের ফলে দীর্ঘ সময় কাজ করা যায়নি। পাশাপাশি স্থানীয় স্তরে জমি সংক্রান্ত কিছু সমস্যাও ছিল। জমি-জট কাটিয়ে এবং পূর্ত, সেচ, বিদ্যুৎ ইত্যাদি সব দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীও নিজে প্রকল্পের অগ্রগতিতে নজরে রাখছেন।’’ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত, পুরসভা বা প্রয়োজনে বিধায়কদের মতো স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা নিয়ে জমির সমস্যা মেটানো হচ্ছে।
প্রকল্পের উপর আচমকা জোর দেওয়া নিয়ে আরও কয়েকটি মত ঘোরাফেরা করছে প্রশাসনের অন্দরে। যেমন, গত আর্থিক বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা অব্যবহৃত থাকার পরেও এই আর্থিক বছরে প্রকল্পটির জন্য প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। এর মধ্যে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সাত হাজার কোটি টাকা করে খরচ করার কথা। উন্নয়নের গতি বাড়ানোর যে প্রতিশ্রুতি ভোটের আগে শাসকদল তৃণমূল দিয়েছিল, তা বজায় রাখতে গেলে জলের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাড়তি জোর দিতেই হবে। আবার পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এই সরকার কেন্দ্রের হাতে এমন কোনও অস্ত্র তুলে দিয়ে চাইবে না, যা রাজ্যের কর্মক্ষমতাকে ‘লঘু’ করে দেখাতে পারে।