—ফাইল চিত্র।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ধর্নামঞ্চের চত্বরে উপাচার্যদের একাংশের উপস্থিতি নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। প্রশ্ন উঠছে, কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের ধর্নামঞ্চে উপাচার্যেরা আদৌ যেতে পারেন কি? বুধবার এই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল তথা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য জগদীপ ধনখড়ও। তাঁর সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তরজার শেষ দেখা যাচ্ছে না।
শিক্ষাবিদদের একাংশ এ দিন জানান, কোনও রাজনৈতিক সভা-সমিতি বা রাজনৈতিক সংগঠনের পাশে উপাচার্যদের দাঁড়ানো নিয়ে কোনও আইন ২০১১ সালের আগে ছিল না। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস সরকারে আসার পরে সংশ্লিষ্ট একটি আইন পরিমার্জন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনও উপাচার্য যদি কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে কথা বলেন বা রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষে দাঁড়ান, তা হলে আচার্য তাঁকে ‘শো-কজ’ করতে বা কারণ দর্শাতে বলতে পারেন। শো-কজের উত্তরে সন্তুষ্ট হতে না-পারলে উপাচার্যকে সরিয়েও দিতে পারেন আচার্য।
এ দিন বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু অবশ্য উপাচার্যদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘ওই ধর্নামঞ্চে কোনও রাজনৈতিক সভা হচ্ছে না। ওটা একটা প্রতিবাদ সভা। ধর্নামঞ্চের উপরে লেখা আছে ‘নো এনআরসি, নো সিএএ, নো এনপিআর’। দলমত নির্বিশষে বিজেপির বিরুদ্ধে সকলেই গিয়েছেন। সকলেই যাচ্ছেন। মানুষ হিসেবে যে-কেউ ওই ধর্নামঞ্চে যেতেই পারেন।’’ উপাচার্যেরা কোনও রাজনৈতিক ধর্নামঞ্চে যেতে পারেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাকে আইন দেখতে হবে। সরকারি কর্মচারীরা কোনও অবস্থাতেই সরকারের বিরুদ্ধে যেতে পারেন না। কিন্তু ওঁরা তো যাচ্ছেন। আমরা তো কিছুই বলছি না।’’
আরও পড়ুন: বিজেপি ‘বিরোধিতা’র প্রশ্নে বাম-কংগ্রেসকে তোপ মমতার
রাজ্যপালের সাম্প্রতিক আচার-আচরণ ও কথাবার্তার জন্য শিক্ষামন্ত্রী এ দিন ফের তাঁকে একহাত নেন। পার্থবাবু বলেন, ‘‘কোনও রাজ্যপালের এমন ধ্বংসাত্মক আচরণ আমরা আগে কোনও দিন দেখিনি। রাজ্যপালের প্রতি আমরা আবার কঠোর হব।’’
সেই সঙ্গেই শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘দড়িকে সাপ ভাবার কোনও কারণ অবশ্য নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শিখণ্ডী হয়েছেন উনি। তবে ওঁকে বাংলা শিখতে হবে। বাংলায় আসবেন, অথচ শুধু ইংরেজি বলবেন, হিন্দিও বলবেন না— এটা হবে না। আমরা বিনীত ভাবে বলছি, আপনি চুপ থাকুন।’’
এই আবহেই আজ, বৃহস্পতিবার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের সমাবর্তনে যাচ্ছেন রাজ্যপাল। সেখানে উপস্থিত থাকার কথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। এই সমাবর্তনে সোনালিদেবী আসছেন কি না, তা জানতে চাওয়া হলে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অধ্যক্ষ ডোমিনিক স্যাভিও বলেন, ‘‘আমরা ওঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। ওঁর আসার কথা আছে। উনি বলেছিলেন, আসবেন। আমরা জানি না, উনি আসবেন কি না।’’
এ দিনেও রাজ্যপাল তোপ দাগেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। রাজ্যের সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে মঙ্গলবার যে-পরিষদ গড়া হয়েছে, তার কথা তিনি জানেন। ধনখড় বলেন, ‘‘আচার্য হিসেবে যদি আমাকে ওই পরিষদে ডাকা হয়, আমি নিশ্চয়ই যাব। তবে ১২ জানুয়ারি উপাচার্যদের সঙ্গে আমার বৈঠক না-হওয়াটা মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়।’’ এর পরেই রাজ্যপাল মন্তব্য করেন, আগে এক্স-রে, সিটি স্ক্যান করে দেখতে হবে, অসুখটা কী। তার ভিত্তিতেই ওষুধ দিতে হবে।