—প্রতীকী ছবি।
পঞ্চায়েত ভোটে এ বার গণনায় কারচুপির অভিযোগ উঠেছে বিস্তর। বিরোধীদের অভিযোগ, ‘আনুগত্য’ দেখাতে এক দল এবং ‘চাপে’র মুখে গণনা-কর্মীদের অন্য একাংশ ‘কারচুপি’তে জড়িয়েছেন। আবার তৃণমূল কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, শাসক দলের ভাবমূর্তি নষ্ট এবং নির্বাচনকে বানচাল করতে গণনা-কর্মী ও পুলিশের একাংশ ‘গভীর চক্রান্তে’ লিপ্ত হয়েছেন। এ রাজ্যে ভোট ঘিরে এমন পরিস্থিতি প্রায় নজিরবিহীন।
কী রকম অভিযোগ এসেছে গণনা-কেন্দ্রের ভিতরের ঘটনা সম্পর্কে? ঘটনা উত্তর দিনাজপুর জেলার একটি গণনা-কেন্দ্রে। বিরোধী একটি দলের প্রার্থীই বার বার এগিয়ে যাচ্ছেন। গণনা-কেন্দ্রের মধ্যেই এক দল লোক ব্যালটে জল ঢেলে দেয়! গণনা-কর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ চিৎকার করে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। আধিকারিক বলে দেন, কিছু করার নেই!
জলপাইগুড়ি জেলার একটি ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রথম ও দ্বিতীয় রাউন্ড গণনার পরে বিরোধী একটি দলের অনুকূলে ফল ছিল ৮-৫। সেই ফলই বদলে যায় শাসক দলের অনুকূলে ৮-৫’এ। ওই এলাকাতেই জেলা পরিষদের একটি আসনে হারা প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। বিডিও ফল প্রকাশের পরে ছুটিতে গিয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি ব্লকে বিডিও দেখেন, একটি পঞ্চায়েতে বর্তমান প্রধান ২০০ ভোটে পরাজিত। উপ-প্রধান তিন ভোটে পিছিয়ে। অভিযোগ, কাউন্টিং টেবিলে গিয়ে বিরোধী দলের ব্যালট হাতে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হল। আর দু’টো বাতিল করা হল বক্স থেকে তুলে। উপ-প্রধান এক ভোটে জয়ী ঘোষিত হলেন! উত্তর ২৪ পরগনার একটি ব্লকে প্রিসাইডিং অফিসারের সই না থাকা ব্যালটকেও বৈধ ধরতে হয়েছে এপিআরও-র হস্তক্ষেপে।
পঞ্চায়েত ভোটের ফল প্রকাশের পরে গণনা-কেন্দ্রে তাঁদের এমন বহু অভিজ্ঞতার কথা রিপোর্ট করেছেন কর্মী এবং আধিকারিকদের একাংশ। রাজ্য নির্বাচন কমিশন অভিযোগ পেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করেনি। কিন্তু আদালতে মামলা গড়াতেই কমিশনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেউ যদি অনৈতিক কাজ করে থাকেন বা তথ্য গোপন করে থাকেন, তার দায় সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নিতে হবে। এর পরই আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে সরকারি কর্মী মহলের একাংশে। অনেকে ভয় পাচ্ছেন ‘ফেঁসে’ যাওয়ার।
জগাছার বিডিও আদালতের তলবে হাজির হয়ে ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা উল্লেখ করায় গুঞ্জন আরও বেড়েছে। তারই মধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে বালুরঘাটের বিডিও-র অভিযোগ, যেখানে গণনা-কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরা এবং মেমরি কার্ডের খোঁজ নেই। বিরোধীদের অভিযোগ, আইনের নজর থেকে বাঁচতেই সিসিটিভি-র ফুটেজ গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।
মহকুমা স্তরের এক সরকারি আধিকারিকের কথায়, ‘‘অনেকেই ভুলে গিয়েছেন, সরকারি কর্মীদেরও একটা সীমাবদ্ধতা আছে। চাইলেই যা খুশি করা বা করানো যায় না!’’ পূর্ব মেদিনীপুরে সিসিটিভি-র ফুটেজ মিলিয়ে আবিষ্কার হয়েছে, ভোটকেন্দ্রে ব্যবহৃত ব্যালট-বাক্স আর গণনা-কেন্দ্রে পাঠানো বাক্সের রং আলাদা! আধিকারিকদের প্রশ্ন, নির্দেশমাফিক ‘বেনিয়মে’র গোটা ব্যবস্থা কাজ না করলে এত ভূরি ভূরি ‘কারচুপি’ কি সম্ভব? বালুরঘাটের অভিযোগ সামনে রেখেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ, ‘‘অনৈতিক কাজগুলো কিছু বিডিও-র গলায় কাঁটার মতো বিঁধছে! আইনের নজর থেকে সুরক্ষিত থাকতেই সিসিটিভি উধাও করে দেওয়া হয়নি তো?’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন-পুুলিশ, দুষ্কৃতী, তৃণমূল— সব সিন্ডিকেটের মতো করেই কাজ করেছে।’’
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা দাবি, ‘‘এখানে ওখানে ব্যালট পড়ে থাকা-সহ আরও নানা ঘটনা যা ঘটছে, সেগুলো কি আদৌ স্বাভাবিক? যেখানে তৃণমূলের শক্তি বেশি, সেখানে এগুলো বেশি করে ঘটানো হচ্ছে পরিকল্পিত ভাবে।’’