মাস কয়েক ধরে জমি নিয়ে টানাপড়েনের আবহেই অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতীর তরফে উচ্ছেদের নোটিস ধরানো হয়েছিল। —ফাইল চিত্র।
অমর্ত্য সেনের নামে ১.৩৮ একর জমির মিউটেশন হলেও তাঁদের কাছেই জমির মালিকানা রয়েছে বলে দাবি করলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে তাঁদের আরও দাবি, ওই জমির কেবলমাত্র ইজারাদারের নাম বদল করে আশুতোষ সেনের জায়গায় অমর্ত্য সেন করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (বিএলআরও)-এর কাছে চিঠিও পাঠিয়েছে বিশ্বভারতী। সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে এমনই দাবি করেছেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অশোক মাহাতো। অমর্ত্যের বিরুদ্ধে দখলদারির অভিযোগ তুলে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
সংবাদিক বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দাবি, ‘‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই এখনও জমির মালিকানা রয়েছে। শুধুমাত্র ইজারাদার হিসাবে নাম পরিবর্তন করে আশুতোষ সেনের জায়গায় অমর্ত্য সেন করা হয়েছে। এবং যে কাগজ ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে কোথাও স্পষ্ট করে বলা নেই যে ১.৩৮ একর জমি অমর্ত্য সেনের নামে করা হল। যদিও ইতিমধ্যেই আমরা বিএলআরও দফতরকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি।’’
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, অমর্ত্যের বাবা আশুতোষকে ১৯৪৩ সালে কখনই ১.৩৮ একর জমি লিজ় দেওয়া হয়নি। বরং ১.২৫ একর জমি লিজ় দেওয়া হয়েছিল। অমর্ত্যের বিরুদ্ধে ১৩ ডেসিমেল জমি দখলের অভিযোগ করে তা ফেরতের দাবি তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁদের আরও দাবি, ’৪৩ সালে বিশ্বভারতী এবং আশুতোষের মধ্যে স্বাক্ষরিত লিজ়ের নিবন্ধিত দলিল ও ২০০৬ সালে কর্মসমিতিতে পাশ হওয়া প্রস্তাব থেকে স্পষ্ট, আশুতোষ বা অমর্ত্যকে ১.৩৮ একর জমি লিজ় দেওয়া তো দূরের কথা, বিশ্বভারতীর কোনও জমিরই মালিকানা দেওয়া হয়নি। শান্তিনিকেতনে ‘প্রতীচী’ নামের প্রাঙ্গণে অমর্ত্যের বাসভবনটিও বিশ্বভারতীর মালিকানাধীন জমিতে তৈরি। এরই মাঝে বিশ্বভারতীর তরফে তিন পাতার নোটিস পাঠানো হয় নোবেলজয়ীকে। বলা হয়, ২৪ মার্চ বা তার আগে শো-কজ় নোটিস পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হবে, কেন অমর্ত্যের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের উচ্ছেদ আইন প্রয়োগ করা হবে না? কারণ, তিনি ‘অন্যায় ভাবে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ডেসিমেল (শতক) জায়গা ‘দখল’ করে রয়েছেন। চিঠিতে ২৯ মার্চ বিকেলে অমর্ত্যকে সশরীরে অথবা তাঁর কোনও প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম কর্মসচিব তথা এস্টেট অফিসারের (যাঁর সই রয়েছে নোটিসে) সামনে হাজির থাকতেও বলা হয়েছে।
মাস কয়েক ধরে জমি নিয়ে টানাপড়েনের আবহেই অমর্ত্যকে উচ্ছেদের নোটিসও ধরানো হয়েছিল। তবে আশুতোষের নামে থাকা জমি অমর্ত্যের নামে করে দেওয়া হয়েছে বলে সোমবার ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (বিএলআরও)-এর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে অমর্ত্যকে উচ্ছেদের দাবিতে যে বিশ্বভারতী অনড় রয়েছে, তা সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট করেছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার। তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আশুতোষ সেনকে ১.২৫ একর জমি লিজ় দিয়েছিলেন। ফলে বাকি অংশটা দখল করাই বলা যেতে পারে। আর সেই মোতাবেক আমরা আগেই নোটিস দিয়েছি। এবং আমরা অন্যান্য লিজ় হোল্ডারের ক্ষেত্রে যে ভাবে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া করে থাকি, এ ক্ষেত্রেও সেই একই কাজ করা হবে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আলাদা ভাবে যেমন কাজ করার তেমন চালিয়ে যাবেন।’’
কর্তৃপক্ষের তরফে কার্যত অস্বীকার করা হয় যে, ১.৩৮ একর জমি অমর্ত্য সেনের নামে করা হয়নি। কিন্তু ইতিমধ্যেই যে কাগজ প্রকাশ্যে এসেছে, সেখানে স্পষ্ট ভাবে লেখা রয়েছে, ১.৩৮ একর জমি অমর্ত্য সেনের নামে করা হল। যদিও বিশ্বভারতীর দাবি, শুধুমাত্র ইজারাদার হিসাবে আশুতোষের জায়গায় অমর্ত্যর নাম দেওয়া হয়েছে।