—ফাইল চিত্র।
দোলের দিন হবে না শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী বসন্তোৎসব—বিশ্বভারতীর এই সিদ্ধান্তে বিতর্ক দানা বেধেছিল। ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। এ বার অবস্থান কিছুটা বদলে ‘প্রশাসনিক সহযোগিতা’ পেলে দোলের দিনই বসন্তোৎসব করা হবে বলে জানালেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সভাকক্ষে এক বৈঠকের পরে এ কথা জানানো হয়েছে বিশ্বভারতীর তরফে।
সূত্রের খবর, দোলের দিনই সেই উৎসব করার আর্জি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে শুক্রবার চিঠি দিয়েছেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব আশা মুখোপাধ্যায়। তাতে তিনি লিখেছেন, গত বছর বসন্ত উৎসবে আড়াই লক্ষ মানুষের ভিড় হয়েছিল। সেই ভিড় সামলানোর ক্ষমতা নেই বিশ্বভারতীর মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। তাই শান্তিনিকেতন-প্রিয় বাঙালি আবেগ ও ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রশাসনিক সাহায্য চাওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, গত বছর উৎসব শেষ হওয়ার পরে আশ্রম চত্বর থেকে ৩৫ বস্তা মদের বোতল ও ১০ ট্রাক্টরের বেশি আবর্জনা অধ্যাপক, কর্মী, পড়ুয়াদের পরিষ্কার করতে হয়েছিল। চিঠিতে সেই প্রসঙ্গ তুলে অনুরোধ করা হয়েছে, দোলের দিন বসন্তোৎসব রাজ্য দায়িত্ব নিয়ে পরিচালনা করুক। বিশ্বভারতী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিষয়টি দেখবে।
শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসব আক্ষরিক অর্থেই সর্বজনীন। আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষের সুযোগ হয়েছে দোলে এখানে আসার, উৎসবের আনন্দ নেওয়ার। বাস্তবিকই এই বসন্তোৎসব আজ বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনের মুখও বটে। কিন্তু, গত বছর উৎসবের সময় যে বিশৃঙ্খলার সাক্ষী থেকেছিল শান্তিনিকেতন, তার প্রেক্ষিতে এ বছর দোলের আগেই বসন্তোৎসব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তা নিয়ে হইচই শুরু হয়ে যায় সাধারণ মানুষ থেকে রাজ্য প্রশাসনেও। হতাশ হয়ে পড়েন বোলপুরের হোটেল ব্যবসায়ীরাও। হস্তক্ষেপ করেন শিক্ষামন্ত্রী। উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি জানান, দোলের দিন বসন্তোৎসবের যে রীতি রয়েছে, তা বজায় থাকুক। দরকারে রাজ্য সরকার সব দিক থেকে সহযোগিতা করবে । এর পরেই জটিলতা কেটেছে বলে দাবি। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার এ দিন বলেন, ‘‘উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর ফোনে কথা হওয়ার পরেই এ দিন বৈঠক হয়েছে। তাতে সর্বসম্মতিতে ঠিক হয়েছে, রাজ্য সরকার প্রশাসনিক দায়িত্ব নিলে দোলের দিনই বসন্তোৎসব হবে।’’ তিনি জানান, বিশ্বভারতী কর্মসমিতির সদস্য, সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেয়ারম্যান করে ছ’জনের কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সুশোভনবাবু বলেন, ‘‘এই বিষয় নিয়ে আমরা খুব তাড়াতাড়ি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব।’’
আরও পড়ুন: উন্নয়নেই কি মাটি কাটার আগ্রহে ভাটা?
শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, ‘‘শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসব বাঙালির ঐতিহ্য ও আবেগ। তাই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে দোলের দিন বসন্তোৎসব করার জন্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলাম। ওঁরা যোগাযোগ করুন। সরকার নিশ্চয় ইতিবাচক পদক্ষেপ করবে।’’