লেলিহান: আগুন জ্বলছে শালবনির পিড়াকাটা থেকে গোয়ালতোড় যাওয়ার রাস্তার ধারের জঙ্গলে। নিজস্ব চিত্র
ঝরাপাতার জঙ্গলে আগুন ধরানো জঙ্গলমহলের চেনা ছবি। কিন্তু এখন সে প্রবণতা বেড়েছে। বাঘ জঙ্গল ছে়ড়ে লোকালয়ে ঢুকতে পারে, এই আশঙ্কায় অনেকে জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। বন দফতরের একাংশের মতে, বাঘ ধরতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আগুনও।
চোরাশিকারিরা এবং কাঠপাচারকারীরা এই সময় জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। কিন্তু আগে যা হত মাঝে মাঝে এ বার প্রায়ই সে ছবি দেখা যাচ্ছে। লালগড়, শালবনি থেকে গোয়ালতোড়— এখন রোজই আগুনে পুড়ছে জঙ্গল। পিঁড়াকাটা পেরিয়ে গোয়ালতোড় যাচ্ছিলেন তপন মাহাতো। জয়পুর, সিজুয়া পেরোনোর পরে জঙ্গলে আগুন দেখে থমকে যান তিনি। তপন বলছিলেন, “এ তো শুধু আগুন নয়, যেন দাবানল!” কিন্তু কেন বাড়ছে এই প্রবণতা? নয়াবসতের বাসিন্দা বিকাশ মুদি মানছেন, “বাঘের ভয় বড় বড়। সেই ভয় থেকেই কেউ কেউ এ ভাবে জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে।”
জঙ্গলে লুকোচুরি খেলছে বাঘ। কখনও লালগড়, শালবনি, কখনও বা গোয়ালতোড়, ধেড়ুয়া, চাঁদড়ায় বাঘের পায়ের ছাপ মিলছে। এই পরিস্থিতিতে বন দফতরের উদ্বেগ বাড়িয়েছে এই আগুন।
বন দফতরের একাংশের মতে, বাঘ ধরতে এই আগুনও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সুন্দরবন থেকে আসা দলের (ট্র্যাঙ্কুলাইজেশন টিম) এক সদস্যের কথায়, “যে জঙ্গলে আগুন জ্বলবে, সেই জঙ্গলে বাঘ কখনও থাকবে না।” বাঘ ধরার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে দিন কয়েক আগে লালগড়ে এসেছিলেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিংহ। দফতর সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে তিনিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। পাশাপাশি নির্দেশ দিয়েছিলেন, খবর পেলে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভিয়ে দিতে হবে। শালবনির এক বনকর্মী অবশ্য বলেন, “আগুন যে ভাবে ছড়াচ্ছে তা নেভানো অসম্ভব। দমকল এলেও পারবে না!” মেদিনীপুরের এক বনকর্তা মানছেন, “বাঘ রোজই এ দিকে-সে দিকে চলে যাচ্ছে। গতিবিধি নজরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। কয়েকটি কারণে বাঘ এ জঙ্গল থেকে ও জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটি কারণ এই আগুনও।”
এ ভাবে আগুন লাগানোর ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সুন্দরবন থেকে আসা দলটির এক সদস্যের কথায়, “একদিকে শিকারিদের অবাধ আনাগোনা। অন্যদিকে আগুন। একের পর এক জঙ্গলে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আমরা নিশ্চিত, বাঘটা খুব আতঙ্কে রয়েছে। ওকে খাঁচাবন্দি করাটা এখন শুধু কঠিন নয়, বেশ কঠিন।”