ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েতে-পঞ্চায়েতে চলছে ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবির। কিন্তু তার খরচ নিয়ে চিন্তায় বহু পঞ্চায়েত এবং ব্লক প্রশাসনের কর্তা। পাশাপাশি, অধিকাংশ আধিকারিক ওই শিবিরে ব্যস্ত থাকায় দৈনন্দিন এবং অন্য প্রকল্পের কাজেরও ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় সূত্রের।
পঞ্চায়েত স্তরে এবং ব্লক প্রশাসনের অনেকের দাবি, শিবির আয়োজনের জন্য এখনও প্রশাসনের উচ্চ স্তর থেকে টাকা মেলেনি। পূর্ব বর্ধমানের একাধিক বিডিও মহকুমা ও জেলা প্রশাসনের কাছে টাকার আবেদন করেছেন। কয়েক জন বিডিও-র দাবি, পঞ্চায়েতগুলি ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের খরচ চেয়ে ব্লকে দরবার করছে। জেলা প্রশাসনকে তা জানানো হয়েছে। জেলাশাসক প্রিয়ঙ্কা সিংলা মন্তব্য করেননি। তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, পরিস্থিতি ‘নবান্ন’-কে জানানো হয়েছে। টাকা এলে, আর্থিক ভাবে দুর্বল পঞ্চায়েতগুলিকে সাহায্যের কথা ভাবা হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমানে পঞ্চায়েতের সংখ্যা ২১৫। ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পে পঞ্চায়েগুলিতে বহু শিবির হচ্ছে। সে জন্য প্যান্ডেল বাঁধা, কর্মীদের খাওয়ার খরচ, বিদ্যুতের বিল, ইন্টারনেটের বিল রয়েছে। যে সব পঞ্চায়েতে শিবির হচ্ছে, সেখানকার প্রধানেরাই আপাতত পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ সামলাচ্ছেন।
মেমারির আমাদপুরের তৃণমূলের প্রধান সাধনা হাজরা, বাগিলার প্রধান অরিন্দম ঘোষাল, রায়না ২ ব্লকের বড়বৈনান পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রামচন্দ্র পালের দাবি, “শিবির করতে অনেক খরচ হচ্ছে। তহবিলের হাল ভাল নয়। তাই বিডিও-র কাছে নিয়মিত টাকা চাইছি।’’ ভাতার পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান পরেশচন্দ্র চক্রবর্তীর দাবি, “শিবির করতে কম-বেশি তিন লক্ষ টাকা লাগবে। কী ভাবে জোগাড় করব, জানি না!’’
একাধিক বিডিও-র ক্ষোভ, শিবির আয়োজনের সুযোগে পঞ্চায়েতের কর্তারা, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকে বিধায়কেরা শিবিরে হাজির থাকছেন। অথচ, এ বিষয়ে নবান্নের নিষেধ রয়েছে। গত বুধবার খণ্ডঘোষের শাঁকারি ১ পঞ্চায়েতের পলেমপুরে ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরে বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ হাজির ছিলেন। বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘মানুষের সুবিধে-অসুবিধে দেখতে গিয়েছিলাম। অনেকেই যাচ্ছেন।’’ প্রশাসন সূত্রের দাবি, ব্লক প্রশাসনের কর্তারা শিবিরে যাওয়ায় ব্লক অফিস কার্যত ফাঁকা থাকছে। দৈনন্দিন কাজ আটকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। একাধিক পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি, ‘‘এখন একশো দিনের কাজের অনুকূল পরিবেশ। কিন্তু সবাই শিবিরে ব্যস্ত থাকায় ওই প্রকল্প খুঁড়িয়ে চলছে।’’ বিজেপির জেলা (বর্ধমান সদর) সাধারণ সম্পাদক সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের টিপ্পনী, ‘‘কাজের বদলে অকাজ হচ্ছে।’’
জেলা সভাধিপতি তথা রায়নার তৃণমূল বিধায়ক শম্পা ধাড়ার অবশ্য দাবি, ‘‘প্রতি পঞ্চায়েতে মাসে তিন দিন শিবির হচ্ছে। তাই অন্য প্রকল্পের কাজে বিশেষ প্রভাব পড়ছে না।’’