স্বামী প্রভানন্দ।
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বামী প্রভানন্দের জীবনাবসান হয়েছে। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। দক্ষিণ কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ তিনি প্রয়াত হন। বয়সজনিত সমস্যায় দীর্ঘ দিন ধরেই ভুগছিলেন প্রবীণ সন্ন্যাসী। গত নভেম্বর থেকে হাসপাতালে ছিলেন। আজ, রবিবার রাতে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে মঠ সূত্রের খবর।
মঠ সূত্রের খবর, ১৯৩১ সালে আখাউড়া গ্রামে (অধুনা বাংলাদেশ) জন্ম হয়েছিল স্বামী প্রভানন্দের। তবে তাঁর ছেলেবেলা কেটেছিল বহরমপুরে। সেই সময় মুর্শিদাবাদের সারগাছি আশ্রমে মা সারদার শিষ্য স্বামী প্রেমেশানন্দের অত্যন্ত স্নেহধন্য ছিলেন প্রভানন্দ মহারাজ। জানা যাচ্ছে, তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সপ্তম অধ্যক্ষ স্বামী শঙ্করানন্দের কাছে মন্ত্রদীক্ষা লাভ করেছিলেন। এরপরে ১৯৫৮ সালে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের নরেন্দ্রপুর আশ্রমে যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালে সঙ্ঘের দশম অধ্যক্ষ স্বামী বীরেশ্বরানন্দের কাছে তিনি সন্ন্যাস-দীক্ষা লাভ করেন। নরেন্দ্রপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি। এ ছাড়াও, সারদাপীঠ, রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানেও বিভিন্ন সেবামূলক কাজে যুক্ত ছিলেন প্রভানন্দ মহারাজ।
নরেন্দ্রপুরে থাকার সময় লোকশিক্ষা পরিষদের দায়িত্বে ছিলেন দুই বছর। কয়েক বছর তিনি রামকৃষ্ণ মিশন সারদা পীঠের অন্তর্ভুক্ত বিদ্যামন্দির কলেজের অধ্যক্ষ এবং তিন বছর সেবা প্রতিষ্ঠান হাসপাতালের সহকারী সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে পুরুলিয়া বিদ্যাপীঠের সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।
মঠ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ১৯৮৩ সালে রামকৃষ্ণ মঠের অছি পরিষদ ও মিশনের পরিচালন সমিতির সদস্য হন স্বামী প্রভানন্দ। ১৯৮৪ থেকে টানা এগারো বছর তিনি মঠ ও মিশনের সহকারী সম্পাদক ছিলেন। এর পরে তিনি গোলপার্কে ইনস্টিটিউট অব কালচার-এর সম্পাদক হন। ২০০৭ সালে মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক হন স্বামী প্রভানন্দ। সকলের কাছে তিনি বরুণ মহারাজ নামেও পরিচিত ছিলেন। ২০১২ সালে তিনি সঙ্ঘের সহ-অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। ভারত, বাংলাদেশ, নেপালে গিয়ে তিনি বহু মানুষকে মন্ত্রদীক্ষা দান করেছেন। এ ছাড়াও, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপ, দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ বহু জায়গায় গিয়ে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ভাবধারা ও বেদান্তের প্রচার করেন প্রভানন্দ মহারাজ। তাঁর একক প্রচেষ্টায় বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ সংগ্রহ মন্দির তৈরি হয়। ইংরেজি এবং বাংলায় লেখা তাঁর বহু বইয়ের মধ্যে রয়েছে রামকৃষ্ণ মঠের আদিকথা, শ্রীরামকৃষ্ণের অন্ত্যলীলা, ব্রহ্মানন্দ চরিত, সারদানন্দ চরিত, ‘ফার্স্ট মিটিং উইথ শ্রী রামকৃষ্ণ’ এবং ‘আর্লি হিস্ট্রি অব রামকৃষ্ণ মুভমেন্ট’।
বেলুড় মঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ রবিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মঠের সাংস্কৃতিক সভাগৃহে শায়িত থাকবে স্বামী প্রভানন্দের দেহ। সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবেন ভক্ত ও অনুরাগীরা। রাত ৯টায় মঠে গঙ্গার ধারে ওই প্রবীণ সন্ন্যাসীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
এ দিন রাতের দিকে টুইট করে প্রবীণ সন্ন্যাসীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকবার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘‘রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বামী প্রভানন্দর ( বরুণ মহারাজ) প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত।... তাঁর মৃত্যুতে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন তথা বৃহৎ জনজীবনে গভীর আধ্যাত্মিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শূন্যতার সৃষ্টি হল। এ ক্ষতি অপূরণীয়। আমি তাঁর সকল অনুগামী, ভক্তবৃন্দ ও ছাত্রবৃন্দকে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই।’’