বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক সুচিত্রা ভট্টাচার্য মারা গেলেন। মঙ্গলবার রাতে ঢাকুরিয়ার বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। হৃদ্রোগজনিত কিছু সমস্যা আগে থেকেই ছিল সুচিত্রার। ডান হাত ভাঙার পরে তা নিয়েও বছরখানেক ধরে ভুগছিলেন। তবে সম্প্রতি অনেকটা সামলে পুজোর লেখায় হাত দিয়েছিলেন।
এ দিন রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বাথরুমে যেতে গিয়ে আচমকাই অসুস্থ বোধ করেন সুচিত্রা। ফিরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার ডাকা হলে তিনি এসে সুচিত্রাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
আকস্মিক এই খবরে শোকাহত সুচিত্রার অনুরাগী পাঠক এবং সাহিত্যিক মহল। অগ্রজ সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কোনও রকমে বলেন, ‘‘বজ্রাঘাতের মতো মনে হচ্ছে। এই তো সে দিন দেখা হল, ফোনে কথা হল। এ ভাবে যে চলে যাবে, ভাবতেই পারিনি।’’ বাণী বসু এবং তিলোত্তমা মজুমদারও একই রকম হতবাক।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহরের বাইরে। রাতে খবর পেয়ে ঝাড়গ্রাম থেকে তাঁর শোকবার্তায় জানান, ‘‘সুচিত্রার প্রয়াণে বাংলা সাহিত্য শুধু এক জন জনপ্রিয় নয়, অত্যন্ত শক্তিশালী কলমকে হারাল। আরও অনেক লেখা তাঁর কাছ থেকে পাওয়ার ছিল আমাদের।’’
জন্ম ভাগলপুরে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। কম বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু করেছিলেন সুচিত্রা। বিয়ের পর কিছু দিন থেমে আবার লেখায় ফেরা। তবে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তার শুরু নব্বইয়ের দশকে। একে একে ‘কাচের দেওয়াল’, ‘কাছের মানুষ’, ‘দহন’, ‘হেমন্তের পাখি’, ‘নীল ঘূর্ণি’, ‘অলীক সুখ’-এর মতো উপন্যাস এবং বেশ কিছু ছোট গল্প তাঁকে বহুলপঠিত লেখকের আসনে বসায়। ২০০৪ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি লেখাতেই মনোনিবেশ করেন সুচিত্রা। বৈঠকী মেজাজ আর হাসিমুখের মানুষটি গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক-সামাজিক ঘটনাতেও বারবার সরব হয়েছেন। এমনিতেও শহুরে মধ্যবিত্ত জীবন ও তার টানাপড়েন ছিল তাঁর লেখার প্রিয় বিষয়। বারবার উঠে আসত মেয়েদের জীবনের কথা। তাঁর লেখা থেকে ‘দহন’, ‘ইচ্ছে’, ‘রামধনু’, ‘অলীক সুখ’-এর মতো বেশ কিছু জনপ্রিয় ছবি তৈরি হয়েছে বাংলায়। আরও কিছু ছবির কথাবার্তাও চলছিল। অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনয় করেছিলেন ‘দহন’ এবং ‘অলীক সুখ’-এ। এ দিন সুচিত্রার প্রয়াণের খবর শুনে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। খুব আন্তরিক সম্পর্ক ছিল আমাদের। মনের একটা জায়গা একেবারে খালি হয়ে গেল। ওঁর ‘দহন’ই তো আমাকে জাতীয় পুরস্কার এনে দিয়েছিল।’’
সুচিত্রার একমাত্র মেয়ে বেঙ্গালুরুতে থাকেন। তিনি এলে বুধবার প্রয়াত লেখকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে।