—প্রতীকী ছবি।
আধার কার্ড নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে বরাবরই আপত্তি রয়েছে শাসকদল তৃণমূলের। বিভিন্ন সময়ে তা নিয়ে সুর চড়াতে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। তবে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প, বিশেষ করে যেখানে আর্থিক সুবিধা জুড়ে রয়েছে, তাতে আধার কার্ডের ব্যবহার কার্যত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ধীরে ধীরে। প্রশাসনিক মহলের একাংশের বক্তব্য, এখন প্রায় এমন সব প্রকল্পে আধারের ব্যবহার নিয়মিত।
খুব সম্প্রতি পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। তাঁদের জন্য বিমার কথাও ঘোষণা করেছেন মমতা। পরিযায়ীদের কারও মৃত্যু হলে বিমার অর্থ পাবে সংশ্লিষ্ট পরিবার। তাই সরকারের কাছে নিজেকে নথিবদ্ধ করতে প্রত্যেক পরিযায়ী শ্রমিককে আহ্বান করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার মুখ্যসচিব ঘোষণা করেছেন, বার্ধক্য ভাতা শর্তসাপেক্ষে (সরকারি মানদণ্ডে পৌঁছলে) পেতে পারবেন যে কেউ। পরিযায়ীদের নথিবদ্ধ-প্রক্রিয়ায় অন্য নথির সঙ্গে লাগবে আধার। আবার বার্ধক্য ভাতাতেও নেওয়া হবে আধারের প্রতিলিপি।
প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এটাই নতুন নয়। এর আগে সরকারের মূল প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্যসাথীতে (পুরোপুরি বাধ্যতামূলক না হলেও) আধার কার্ড নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের ক্ষেত্রে নির্দেশই রয়েছে, উপভোক্তার থাকতে হবে আধার-যুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। রাজ্যের ডিজিটাল রেশন কার্ডের তালিকাকে ‘ত্রুটিমুক্ত’ করতে আধার-যাচাইয়ের পদ্ধতিও চালু রয়েছে। আবার কেন্দ্রের অনুদানভুক্ত প্রকল্পগুলির মধ্যে একশো দিনের কাজ এবং প্রধানমন্ত্রী আবাসেও আধার প্রয়োজন।
তবে আধার-প্রক্রিয়ার শুরু থেকে রাজনৈতিক ভাবে আপত্তি ছিল এ রাজ্যের। গত ২১ অগস্ট ইমাম-মোয়াজ্জেনদের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “কয়েক বছর আগে বিজেপি সরকার বলল, সবাইকে আধার কার্ড করতে হবে। আধার কার্ডে সব তথ্য দিতে হবে।... আধার কার্ড আঁধারে নিয়ে গিয়েছে, তোমার সব কিছু বের করে নিয়ে চলে গিয়েছে। যেই সব নেওয়া হয়ে গিয়েছে, এখন বলছে আধার কার্ডে সব দিও না। নিয়ে নিয়েছে তো সব! কোটি কোটি মানুষ আজ এর জন্য সমস্যায় জর্জরিত। আধার না থাকলে রেশন কার্ড, আবাসে নাম উঠবে না, সরকারি সুবিধা পাবে না!” প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজনৈতিক বিরোধিতা যাই থাকুক, আধারে আর্থিক ভাবে উপকৃত হয়েছে রাজ্যও। আধার-যাচাইয়ের কারণে প্রায় ২ কোটি ‘ভুয়ো’ রেশন কার্ডের ‘বোঝা’ থেকে মুক্ত হতে পেরেছে রাজ্য। এতে সরকারের সাশ্রয় হচ্ছে বছরে কমবেশি সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। তা ছাড়া যে প্রকল্পগুলিতে আর্থিক সুবিধা রয়েছে, সেগুলিতে সরাসরি উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়। ফলে আধার-নির্ভর যাচাই থাকলে ‘ভুয়ো’ উপভোক্তা চিহ্নিত করার কাজ অনেক সহজে হয়।
এমনিতে রাজ্যের যে আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে যে কোনও আর্থিক সুবিধাদান সরকারের পক্ষে বেশ কষ্টকর। কিন্তু সুবিধাপ্রাপকদের যাচাই নিখুঁত থাকলে অর্থ জলে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে। ফলে প্রশাসনিক ভাবে এর ব্যবহার রাজনৈতিক অবস্থানের কার্যত বিপরীত।