সন্দীপ ঘোষ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
সন্দীপ ঘোষের জামিন মঞ্জুর হতেই শুক্রবার ফের রাস্তায় নেমে লড়াইয়ের ডাক দিল বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন। রাজ্য ও কেন্দ্রের যৌথ আঁতাঁতের অভিযোগ তুলে আবার জনগণকে পাশে চেয়েছেন সিনিয়র ও জুনিয়র ডাক্তারদের একটা বড় অংশ। আজ, শনিবার দুপুরে সিবিআই দফতর অভিযান থেকে ধর্মতলায় সমাবেশ— সবই রয়েছে কর্মসূচির তালিকায়।
এ দিন রাতে আর জি কর চত্বরে মোমবাতি মিছিল করে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। যোগ দেন সিনিয়রদের অনেকেও। স্লোগান তোলা হয়, ‘সন্দীপের জামিন হল কেন, সিবিআই জবাব দাও’। হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, কোনও ভাবেই সিবিআইয়ের এই উদাসীনতা মেনে নেওয়া হবে না। মিছিলে অংশ নেওয়া জুনিয়র চিকিৎসকদের অনেকেই বলেন, “তথ্যপ্রমাণ লোপাটের একাধিক প্রমাণ রয়েছে। তার পরেও সিবিআই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিতে পারল না। তা হলে সিবিআইও কি ন্যায়বিচার হোক, তা চায় না?”
হতাশা ও ক্ষোভের সুর জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের সদস্যদের গলাতেও, যাঁরা প্রথম থেকে বার বার দাবি করেছিলেন তথ্যপ্রমাণ লোপাটে সন্দীপ ও অভিজিৎ দু’জনেই যুক্ত। কিন্তু চার্জশিট দিতে না পারার কারণে জামিন হয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ধিক্কার জানিয়েছেন ফ্রন্টের সদস্যেরা। ফ্রন্টের তরফে অনিকেত মাহাতো বলেন, “দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা ও সর্বোচ্চ আদালতের যদি এই ভূমিকা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন?” তদন্তে ব্যর্থতার দায় সিবিআইকেই নিতে হবে বলে দাবি করেন অনিকেত।
সরকারি মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত অবস্থায় খুন ও ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত ও নির্যাতিতার জন্য ন্যায়বিচারের প্রসঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্যের ভূমিকার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন। চার্জশিট দিতে না পারা এবং জামিনের বিরোধিতা করে আজ, শনিবার সল্টলেকে সিবিআই দফতর অভিযানের ডাক দিয়েছে মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার, সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম এবং জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। তাতে সাধারণ মানুষকে শামিল হওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে। মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের রাজ্য সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্র বলেন, “আমরা মনে করি রাজ্য প্রশাসন, সিবিআই ও কেন্দ্রীয় সরকার তীব্র ষড়যন্ত্র করে অভিযুক্তদের বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এতে প্রশাসনের উপর আর কোনও আস্থা রাখার মতো জায়গা মানুষের মধ্যে থাকল না।”
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সিবিআই সময় মতো চার্জশিট পেশ করেনি এবং রাজ্য সরকারও অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলে সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, “সিবিআই ও রাজ্য সরকার, কেউ দায় এড়াতে পারে না। কেন্দ্রীয় সরকারও পুরো বিষয়ে নীরব থেকে কার্যত অপরাধীদের বাঁচানোরই চেষ্টা করছে।”
‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তরুণী চিকিৎসকের বৃহত্তর পরিবারের অংশ আমরাও। সিবিআই কর্তব্য ঠিক মতো পালন করেছে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে আগেই প্রশ্ন ছিল। এই সমস্ত প্রশ্ন নিয়ে জনগণের আন্দোলনই একমাত্র প্রতিবাদের পথ।” আজ অভয়া মঞ্চের তরফেও ধর্মতলায় প্রতিবাদসভা হবে। সেখানে প্রশ্ন তোলা হবে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী ও সিবিআইয়ের অধিকর্তার দায়বদ্ধতা নিয়েও।