দেশ রাজ। নিজস্ব চিত্র।
লকডাউনে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে আটকে পড়েছিলেন। অসুস্থ হয়ে ঠাঁই হয়েছিল হাসপাতালে। কিন্তু প্রায় মুখ বুজে থাকা যুবকের বাড়ি কোথায় তা জানতে সমস্যা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত হ্যাম রেডিও অপারেটরদের সৌজন্যে জানা গেল, বছর ৩৭-এর ওই যুবক দেশ রাজ হরিয়ানার কারনাল জেলার সামানা ভাউ গ্রামের বাসিন্দা। যোগাযোগ হল তাঁর পরিবারের সঙ্গে।
‘লকডাউন’-এর কিছু দিন আগে ট্রেনে চড়ে দুর্গাপুরে চলে এসেছিলেন দেশ। লকডাউন-পর্বে দুর্গাপুরেই আটকে পড়েছিলেন দেশ। ঠাঁই হয়েছিল দুর্গাপুর স্টেশনে। ভবঘুরেদের থাকার জন্য দুর্গাপুরে পুরসভার একটি আবাস রয়েছে। ‘অভয়াশ্রম’ নামে ওই আবাস পরিচালনার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কালী পুজোর সময়ে দেশকে অভয়াশ্রমে আনা হয়। কিন্তু কয়েকদিন থাকার পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মৃগী রোগের সমস্যায় ভুগছেন তিনি। চিকিৎসকেরা জানান, দেশের কিছু, মানসিক সমস্যাও রয়েছে।
সপ্তাহখানেক আগে দেশকে হাসপাতাল থেকে অভয়াশ্রমে ফিরিয়ে আনা হয়। বিষয়টি কিছু দিন আগেই জানতে পারেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির সভাপতি দুর্গাপুরের কবিগুরু দ্বিতীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা ওয়েষ্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সদস্য হ্যাম রেডিয়ো অপারেটর গৌতম ঘোষ। তিনি যোগাযোগ করেন ওয়েষ্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের সঙ্গে।
এর পরেই শুরু হয় দেশের ঠিকানা জানার কাজ। গৌতমবাবুরা জানান, প্রায় কোনও কথা বলেন না দেশ। তবে, বারবার ঠিকানা জিজ্ঞাসা করায় অস্ফুট ভাবে ‘হরিয়ানা’, ‘কারনাল’ এমন কিছু শব্দ বলেছিলেন। তবে সে সবও হরিয়ানভি উচ্চারণে। তবে সে সূত্রেই অম্বরীশবাবুরা যোগাযোগ করেন হরিয়ানার হ্যাম অপারেটরদের সঙ্গে। সেখান থেকে খবর যায়, সে রাজ্যের পুলিশের কাছে। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘শুক্রবার রাতে ওই ব্যক্তির পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়। মায়ের ছবি দেখে উনি চিনতেও পেরেছেন তিনি। পরিবারের লোকজন দুর্গাপুরে এলে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নিয়ম মেনে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে দেশকে।’’ এ ভাবে দেশকে ‘দেশের বাড়ি’ ফেরাতে পেরে খুশি অরিন্দমবাবুরা। দেশ রাজের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, ছেলেকে ফেরত নিতে দুর্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পরিকল্পনা করছেন তাঁরা।