দেওয়া হচ্ছে করোনা টিকা। ছবি: পিটিআই।
কবে মিলবে প্রতিষেধক? রাজ্য জুড়ে এখন এই একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের মধ্যে। কারণ গত ১ মে থেকে প্রতিষেধক দেওয়ার তৃতীয় পর্বে ওই বয়সিদের প্রতিষেধক দেওয়া আওতায় আনার কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তবে তার জন্য সরকারি বা বেসরকারি উভয়কেই সরাসরি প্রতিষেধক প্রস্তুতকারী সংস্থার থেকে প্রতিষেধক কিনতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই পদ্ধতিতে কী ভাবে প্রতিষেধক মিলবে তা এখনও স্পষ্ট নয় অনেক বেসরকারি হাসপাতালের কাছে। ফলে প্রতিষেধক না-থাকার কারণে বেসরকারি স্তরে সর্বত্রই ১ মে থেকে প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় যেমন দেওয়া বন্ধ, তেমনই ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের প্রতিষেধক দেওয়াও শুরু করা যায়নি।
পুরো বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে মঙ্গলবার শহরের দুটি বেসরকারি হাসপাতালে ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের প্রতিষেধক দেওয়ার খবর মিলেছে। ই এম বাইপাসের ধারের অ্যাপোলো এবং আলিপুরের উডল্যান্ডস্ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন। উডল্যান্ডস্ হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও চিকিৎসক রূপালী বসু বলেন, ‘‘ভারত বায়োটেকের থেকে আমরা সরাসরি কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধক কিনেছি। ১৮-৪৪ বছর বয়সি ২৫০ জনকে প্রথম দিন প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। আমরা মাসে ২৫ হাজার জনকে প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্য মাত্রা নিয়েছি।’’ তিনি আরও জানান, কার্যকারিতার হার অনেক বেশি, ভারতীয় স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কাজ করা, চার সপ্তাহ পরেই দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে বলেই তাঁরা কোভ্যাক্সিনকে বেছেছেন। তিনি জানান, ১২০০ টাকায় কোভ্যাক্সিন কেনা হলেও তার উপরে পরিকাঠামোগত খরচ হিসেবে আরও ৩০০ টাকা অতিরিক্ত ধার্য করা হয়েছে। অর্থাৎ ১৫০০ টাকায় আলিপুরের ওই হাসপাতালে প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় মিলছে।
অ্যাপোলো হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট জয় বসু বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতাল গোষ্ঠীর সর্বভারতীয় চেন পদ্ধতিতে কিছু প্রতিষেধক মিলেছে। তা দিয়েই পরীক্ষামূলক ভাবে ১৮-৪৪ বছরের কয়েকজনকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। তবে দ্বিতীয় ডোজ়ের উপরেই আমরা বেশি জোর দিচ্ছি।’’ যদিও এ দিন উডল্যান্ডস-এ দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া হয়নি। রূপালী বলেন, ‘‘দ্বিতীয় ডোজ় দিতে পারছি না। কারণ সেটা সরকার সরবরাহ করবে বলেছে। তা ছাড়া কোভিশিল্ড মিলছেও না। তাই কেনা সম্ভব হচ্ছে না।’’
যদিও শহরের অন্য বেসরকারি হাসপাতালে কবে থেকে ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। পূর্বভারতে বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের সভাপতি রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘এখন খোলা বাজারে প্রতিষেধক পাওয়া যাচ্ছে। তাই ওই দুই হাসপাতাল নিজেদের ব্যক্তিগত পরিচিতি মারফত প্রতিষেধক পেয়েছেন। আরও কয়েকটি হাসপাতালও নিজেদের পরিচিতি মারফত হয়তো পেয়ে যাবেন। সেগুলি বাদ দিলে বাকি বেসরকারি হাসপাতালের কাছে প্রতিষেধক কবে কী ভাবে মিলবে তা স্পষ্ট নয়। তবে সরকার সহযোগিতার সব রকম চেষ্টা করছেন। আশা করছি শীঘ্রই হয়তো দ্বিতীয় ডোজ়ের প্রতিষেধক মিলবে।’’ তিনি আরও জানান, হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাদে বাংলার সব বেসরকারি হাসপাতালই রাজ্য সরকারের মাধ্যমে ভারত বায়োটেক ও সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছে প্রতিষেধকের জন্য রিকুইজিশন পাঠিয়েছে। কিন্তু এখনও তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। আশা, মাসের শেষের দিকে হয়তো মিলবে।
অন্য দিকে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আজ, বুধবার রাজ্যে ৪ লক্ষ কোভিশিল্ড এবং ১ লক্ষ কোভ্যাক্সিন আসছে। এক আধিকারিক জানান, সরকারি স্তরে দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য কোভিশিল্ড এবং ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের জন্য কোভ্যাক্সিন ব্যবহার করা হবে। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি সর্বত্র কবে থেকে ১৮-৪৪ বছরের বয়সিদের প্রতিষেধক চালু হবে? প্রশ্ন সেটাই।