প্রতীকী ছবি।
সূচনা থেকেই শিক্ষক বদলির ‘উৎসশ্রী’ পোর্টালে যে-সমস্যার শুরু, নানান ব্যবস্থাগ্রহণ সত্ত্বেও তার সুরাহা হচ্ছে না। স্কুলের ‘সিঙ্গল টিচার’ বা একক শিক্ষকও (একটি বিষয়ের জন্য মাত্র এক জনই শিক্ষক বা শিক্ষিকা) বদলির আবেদন করতে পারবেন বলে শিক্ষা দফতর বুধবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই কথা জানিয়ে দেওয়ার পরে আশা করা হচ্ছিল, সমস্যা বুঝি আপাতত মিটল। কিন্তু শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, এর ফলে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের একক শিক্ষকদের বদলির ঝঞ্ঝাট মিটলেও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলি-সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।
একক শিক্ষক বদলির নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, স্কুলের একটি বিষয়ের একমাত্র শিক্ষক বা শিক্ষিকা বদলির আবেদন করলে সেখানে যে-পদ শূন্য হবে, তা পূরণের জন্য কাছাকাছি কোনও স্কুলের একই বিষয়ের কোনও শিক্ষক অস্থায়ী ভাবে পড়াবেন। যিনি সেখানে পড়াতে যাবেন, তাঁর স্কুলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একাধিক শিক্ষক থাকতে হবে। পরে স্থায়ীভাবে যখন ওই শূন্য পদ পূরণ করা হবে, তখন পাশের স্কুলের যে-শিক্ষক অস্থায়ী ভাবে পড়াতে গিয়েছিলেন, তিনি তাঁর পুরনো স্কুলে ফিরে যাবেন।
কিন্তু উচ্চ প্রাথমিক (পঞ্চম থেকে অষ্টম) স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে পাঁচ-ছ’জনের বেশি শিক্ষক বা শিক্ষিকা নেই। একটি বিষয় পড়ানোর শিক্ষক বা শিক্ষিকা এক জনই। এই অবস্থায় যদি কোনও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি হন, তা হলে পাশের উচ্চ প্রাথমিক স্কুল থেকে কী করে কোনও শিক্ষক অস্থায়ী ভাবে তাঁর জায়গায় পড়াতে যাবেন? পাশের স্কুলের কেউ চলে গেলে তো তাঁর নিজের স্কুলে সেই বিষয় পড়ানোর জন্য কোনও শিক্ষক থাকবেন না।
শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর বক্তব্য, শুধু উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের একক শিক্ষকের বদলি-সমস্যা মেটালে হবে না। উচ্চ প্রাথমিকের একক শিক্ষকের বদলি কী ভাবে হয়, সেটাও সরকারকে ভাবতে হবে।
একক শিক্ষকে বদলির সমস্যা অনেকটা মিটলেও শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, বদলি নিয়ে আরও কিছু সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। যেমন উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে দ্রুত বদলি করা হবে বলা হলেও নানা স্তরে আবেদন আটকে আছে। অভিযোগ, বেশ কিছু বদলির আবেদন ৩০-৩৫ দিন ধরে পড়ে আছে স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-তে। ফলে বদলির আবেদন গ্রাহ্য হল কি না, আবেদনকারী তা বুঝতে পারছেন না। কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেসের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘এই ধরনের বেশ কিছু আবেদনকারীর খবর পাওয়া যাচ্ছে, যাঁরা নিজেদের বদলির আবেদনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকারে রয়েছেন।’’
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য বলেন, “উৎসশ্রী একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রথমেই বলেছিলাম, যদি কোথাও ভুলচুক হয়ে থাকে, তা শুধরে নেওয়া হবে। আমরা এর আগেও শুধরে নিয়েছি। যে-কোনও ইতিবাচক পরামর্শকে স্বাগত জানাচ্ছি। কোথাও কোনও অসুবিধা থাকলে তার সংশোধন প্রক্রিয়াও চালু থাকবে।”