ফাইল চিত্র।
রাজ্যের পুরসভা এবং পুর নিগমগুলির হাত থেকে কর্মী নিয়োগের অধিকার কেড়ে নিল পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। সম্প্রতি এক নির্দেশিকায় সরকার জানিয়ে দিয়েছে, এখন থেকে গ্রুপ-ডি কর্মী বাদ দিয়ে পুরসভাগুলির কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মী নিয়োগ হবে। নিয়োগ করবে ওয়েস্টবেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন(ডব্লিউএমএসসি)। আগে মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কেবলমাত্র কলকাতা পুরসভার কর্মী নিয়োগ হত। গত বছর সরকার ডব্লিউএমএসসি গঠন করেছে।
পুর দফতর সূত্রের খবর, গত ১০ বছরে ১১৮টি পুরসভা এবং ৭টি পুর নিগমে কর্মী নিয়োগ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। পুর দফতরের অনুমোদন ছাড়াই অনেক পুরসভা অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করেছিল বলে অভিযোগ। অর্থ দফতর অনুমোদিত পদের উপর নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন দেওয়ার কথা ঘোষণা করতেই পুরসভাগুলিতে কয়েক হাজার এমন কর্মীর হদিস মেলে যাঁরা বছরের পর বছর কাজ করে গেলেও তাঁদের পদের ও কাজের কোনও সরকারি অনুমোদনই ছিল না। সূত্রের খবর, গত এক বছরে অন্তত দেড় হাজার এমন অননুমোদিত পদের মঞ্জুরি দিতে বাধ্য হয়েছে পুর দফতর। সেই কারণেই কম বেশি সব পুরসভার চেয়ারম্যানেরা নিয়োগে নিয়ম না মানার ফলে স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক অসন্তোষও তৈরি হচ্ছিল বলে পুর কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন। বাধ্য হয়েই সরকার পুর চেয়ারম্যানদের হাত থেকে নিয়োগের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পুরকর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পুর কর্তারা জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগের ফলে কোনও পুরসভায় শূন্য পদে রাজ্যের যে কোনও প্রান্তের চাকরি প্রার্থী আবেদন করতে পারবেন। প্রতিযোগিতা হওয়ায় কর্মীদের গুণগত মান বাড়বে। পাশাপাশি স্থানীয় পুরচেয়ারম্যানদের হাতে থেকে নিয়োগের অধিকার কেড়ে নেওয়ায় স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠাও বন্ধ হবে। আপাতত ২০২১ এ বিধানসভা ভোটের আগে সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কোনও নিয়োগের সম্ভাবনা নেই। তবে শিক্ষক নিয়োগ, কলেজে নিয়োগ, অন্যান্য সরকারি চাকরিতে নিয়োগ নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, পুরসভাগুলির কাছ থেকে নিয়োগের ক্ষমতা কেড়ে কেন্দ্রীয়ভাবে দেওয়ার ফলে বেকার যুবক-যুবতীদের মধ্যে নিয়োগে স্বচ্ছতার প্রশ্নে আশার আলো জাগবে বলে মনে করছেন পুর কর্তাদের একাংশ।
এতদিন পুরসভাগুলি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য ডিরেক্টর লোকাল বডিজ(ডিএলবি) এর অনুমোদন নিলেই হত। অনেক ক্ষেত্রে আগে নিয়োগ করে, পরে সেই পদের অনুমোদনও করিয়ে নিয়ে যেতেন পুর চেয়ারম্যানেরা। এ ছাড়া পুরসভাগুলিতে রয়েছে চুক্তির কর্মী। সরকারি সূত্রে খবর, এখন ১১৮টি পুরসভায় প্রায় ১২ হাজার চুক্তিভিত্তিক কর্মী রয়েছেন। কলকাতা পুর নিগমে রয়েছেন আরও প্রায় ১১ হাজার চুক্তিভিত্তিক কর্মী। তা ছাড়া অননুমোদিত পদে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ২০০০ কর্মীর পদ গত দু’তিন বছরে অনুমোদন দিতে বাধ্য হয়েছে পুর দফতর। এঁদের অধিকাংশের কোনও নিয়মনীতি না মেনেই নিয়োগ হয়েছিল। এখন ঠিক হয়েছে, পুরসভাগুলিতে পদ ফাঁকা হলে বা কর্মীর প্রয়োজন হলে তা পুর দফতরে প্রস্তাব আকারে পাঠাতে হবে। পুর দফতর অর্থ দফতরে তা অনুমোদনের জন্য পাঠাবে। অর্থ দফতর অনুমোদন দিলে ডব্লিউএমএসসি-র কাছে নিয়োগের জন্য পাঠাবে পুর দফতর। এর ফলে লোক পেতে কিছুটা সময় লাগলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে বলেই মত পুর কর্তাদের একাংশের।