পরিবারের দাবি, বিষপান করে দু’জন আত্মঘাতী হয়েছেন। প্রতীকী ছবি।
প্রাক্তন উপপুরপ্রধান তৃণমূলের অপর্ণা ভট্টাচার্য (৫১) এবং তাঁর স্বামী জেলা শিশুকল্যাণ সমিতির প্রাক্তন সদস্য সুবোধ ভট্টাচার্যের (৬৩) অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে শনিবার চাঞ্চল্য ছড়াল জলপাইগুড়িতে। সুবোধের দিদি তথা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, মৃতদের ঘর থেকে পুলিশ চার পাতার চিঠি বা ‘সুইসাইড নোট’ উদ্ধার করেছে। সন্ধ্যায় সে চিঠি (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) সমাজমাধ্যমে ছড়ায়। তাতে অপর্ণা ভট্টাচার্যের বয়ানে লেখা রয়েছে— ‘নিম্নলিখিত কারণ ও প্রভাবশালীদের চাপের জন্য আমি ও আমার স্বামী অনন্যোপায় হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম’। তার নীচে ‘বর্তমান উপপুরপ্রধান সৈকত চট্টোপাধ্যায়’ এবং ‘১৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সন্দীপ ঘোষ’-এর নাম রয়েছে। ঘটনায় নিজেদের যোগ মানেননি তৃণমূলের নেতারা। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার উমেশ খাণ্ডবহালে বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। সুইসাইড নোট মিলেছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে।“
পরিবারের সদস্যদের দাবি, পান্ডাপাড়ার বাড়িতে এ দিন ভোরে অর্পণা-সুবোধের ঘর থেকে গোঙানি শোনা যায়। হাসপাতালে ডাক্তারেরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের দাবি, বিষপান করে দু’জন আত্মঘাতী হয়েছেন। ময়না-তদন্তের পরে, তাঁদের দাহ করা হয়।
জলপাইগুড়ি পুরসভায় ২০০০ সালে দু’বছরের জন্য ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে উপপুরপ্রধান হন অর্পণা। পরে, তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। সুবোধ সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন না। তবে গত পাঁচ বছর জলপাইগুড়ি জেলা শিশুকল্যাণ সমিতির সদস্য ছিলেন। সুবোধের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৭ সালে জলপাইগুড়ি জেলায় শিশু বিক্রির চক্রের হদিস পায় সিআইডি এবং সাত জনকে ধরা হয়। অর্পণার বয়ানে লেখা চিঠিতে (সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) দাবি করা হয়েছে, সে চক্র প্রকাশ্যে আনায়, তাঁর স্বামীর উপরে ‘প্রভাবশালীরা’ ক্ষুব্ধ হন এবং হুমকি দিয়ে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করেন। অর্পণার নামে চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে টাকা তোলার মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে, উল্টে টাকা দাবি করা হয়।
বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “আমার ভাই এবং ভাইয়ের বউয়ের উপরে যে চরম অত্যাচার হয়েছে, সে সব লেখা আছে সুইসাইড নোটে। পুলিশ ধামাচাপা দিতে চাইলে, সিবিআই-তদন্তের দাবি জানাব।’’ তিনি জানান, আজ, রবিবার এ ব্যাপারে সাংবাদিক বৈঠক করতে পারেন।
জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা উপপুরপ্রধান সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সুইসাইড নোট দেখিনি। অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে জানা নেই। সারাদিন দুয়ারে সরকারের কাজে ছিলাম। প্রয়োজনে, সাংবাদিক বৈঠক করব।” অন্য দিকে, পুরপ্রতিনিধি সন্দীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ওই দম্পতিকে চিনি না। সন্দীপ ঘোষ অনেকেই আছেন। কে সুইসাইড নোটে, কার নাম লিখেছেন, জানা নেই।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি মহুয়া গোপ বলেন, “পুলিশ তদন্ত করে দেখবে। এটা সম্পূর্ণ আইনি বিষয়।’’