তাণ্ডব বিজেপির, উত্তেজনা বাম বিক্ষোভেও

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস তালুক হাজরা মোড়ে বিজেপি-র বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র। বস্তুত, আসানসোলে তৃণমূলের বদলা হিসাবে কলকাতায় বিজেপি-র পাল্টা তাণ্ডব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩২
Share:

বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের রোষের মুখে পুলিশের গাড়ি। বৃহস্পতিবার হাজরায়। ছবি: সুদীপ আচার্য।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস তালুক হাজরা মোড়ে বিজেপি-র বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র। বস্তুত, আসানসোলে তৃণমূলের বদলা হিসাবে কলকাতায় বিজেপি-র পাল্টা তাণ্ডব। আর বাইপাসের ধারে মিলন মেলা চত্বরে সরকারি আয়োজনে খাদ্যোৎসব ‘আহারে বাংলা’র প্রতিবাদে বাম বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে বচসা। শহরের দুই এলাকায় বৃহস্পতিবার বিরোধীদের দুই কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল বৃহস্পতিবার। দুই বিরোধী পক্ষই পুলিশকে শাসক দলের শাখা সংগঠন হিসাবে কাজ করার অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলেছে।

Advertisement

আসানসোলে বুধবার তৃণমূলের বিক্ষোভে পড়ে ইটের ঘা খেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তার প্রতিবাদেই এ দিন হাজরা মোড়ে রীতিমতো পেশি আস্ফালন দেখিয়েছে বিজেপি। বিক্ষোভকারীদের অনেককেই পুলিশ ভ্যানে চড়িয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পরে দেখা গিয়েছে, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের উপরে আশুতোষ কলেজ ছাড়িয়েও বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে পড়ে রয়েছে অজস্র ইটের টুকরো। দেখা যায়, ওই রাস্তাতেই একটা ‘ছোটা হাতি’তে থান ইট মজুত করা রয়েছে। তার চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বাবুলের উপরে তৃণমূলের হামলার প্রতিবাদে এ দিন সব জেলাতেই বিজেপি যুব মোর্চার প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল। তারই অংশ হিসাবে কলকাতায় রাসবিহারী মোড় থেকে মিছিল করে হাজরা মোড়ে আসেন দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ, রাজ্যসভার সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়-প্রমুখ বিজেপি-র নেতা-কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দিকে তাঁরা হাঁটতে শুরু করলে পুলিশ প্রথমে বাধা দেয়। তাঁরা আরও কিছুটা এগোলে পুলিশের কর্ডনে মিছিল আটকে পড়ে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের এক প্রস্ত ধস্তাধস্তি হয়। সেই সময়ই মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে কয়েক জন বিজেপি কর্মীকে এক জন মহিলা পুলিশকে ঝান্ডার লাঠি দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায়। ইটও উড়ে আসে পুলিশের দিকে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ) মুরলীধরের হাতে ইটের আঘাত লাগে। তার পরে পুলিশ লাঠি চার্জ এবং ধরপাকড় শুরু করে।

Advertisement

বিজেপি কর্মীদের অনেকেই পুলিশের দিকে তেড়ে যান। শান্তিপূর্ণ গণ-আন্দোলনে পুলিশ কেন ঝাঁপিয়ে পড়ল, সে প্রশ্ন তুলে হাজরা মোড়ের চার মাথা জুড়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছিলেন রূপা। পুলিশকে বলছিলেন, ‘‘আমাকে মারুন!’’ লকেট-সহ কয়েক জন কর্মীকে পুলিশ সরে যেতে বলায় লকেট বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তিনি প্রশ্ন করেন, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কেন তাঁদের সরে যেতে বলছে? বিজেপি নেতাদের আরও দাবি, বাইরে থেকে ইট ছুড়ে তাঁদের উপরে দোষ চাপানো হয়েছে।

বামেদের বিক্ষোভ ঘিরে পরিস্থিতি অবশ্য এতটা উত্তপ্ত হয়নি। মিলন মেলা চত্বরে ‘আহারে বাংলা’র হোর্ডিংয়ে বাম বিক্ষোভকারীরা স্লোগান লিখে দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে তাদের বচসা বাধে। বিক্ষোভ-সমাবেশ শেষ হওয়ার মুখে ডিসি গৌরব শর্মার নেতৃত্বে বাড়তি পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে স্লোগান লেখক ছাত্র ও যুব আন্দোলনকারীদের ধরপাকড়ের চেষ্টা চালায়। বাধা দেন বিক্ষোভকারীরা। বচসার মধ্যেই পুলিশের হাত থেকে ছাত্র-যুবদের ছাড়িয়ে নেন বাকি বিক্ষোভকারীরা। কেন সরকারি হোর্ডিং নষ্ট করা হয়েছে এবং মিলন মেলা প্রাঙ্গনে লাল পতাকা লাগানো হয়েছে, তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসা বাধে সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তী, সুজন চক্রবর্তীদের। গোলমালের মধ্যেই এক সময়ে রণে ভঙ্গ দেয় পুলিশ। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হবে বলে জানিয়েছে তারা।

সুজনবাবু পরে বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশ-প্রশাসন হঠাৎ প্ররোচনা তৈরি করেছে। মনে হচ্ছে, পুলিশের কোনও দায়বদ্ধতা ছিল কিছু করার! জেলে যেতে আমাদের কেউ ভয় পায় না। কিন্তু এ ভাবে চলতে থাকলে ‘আহারে বাংলা’ চলাকালীন আরও প্রতিবাদ হবে।’’ এই ঘটনার আগে তপসিয়া চৌমাথা থেকে মিলন মেলা পর্যন্ত মিছিল করে আসেন শ্যামলবাবু, সুজনবাবু, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘কল-কারখানা বন্ধ। চা-শ্রমিকদের মৃত্যু হচ্ছে। এই সময়ে সরকারি আয়োজনে এমন মোচ্ছব করে মানুষের সঙ্গে পরিহাস করা হচ্ছে!’’

বিজেপি আবার এ দিনের গোটা ঘটনার প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার রাজ্যের সব জেলা সদরে ‘কালা দিবস’ পালন করার ডাক দিয়েছে। দলের তরফে আজ রাজ্যপাল ক‌েশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টাও হবে। হাজরায় এ দিনের বিক্ষোভ থেকে বিজেপি-র সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার এবং যুব মোর্চার সভাপতি তুষার ঘোষ গ্রেফতার হয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement