কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ফাইল ছবি।
হারজিৎ নিয়ে ভাবার দরকার নেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনে লক্ষ্য হবে দলকে বুথস্তরে দৃশ্যমান করে তোলার। কিন্তু পাখির চোখ করতে হবে আগামী লোকসভা নির্বাচনকে। রাজ্য বিজেপির জন্য এই সুর আগেই বেঁধে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এ বার রাজ্য নেতৃত্ব এবং দলীয় কর্মীদের দিকনির্দেশ দিতে বছরের শুরুতেই বাংলায় আসছেন অমিত শাহ!
বিজেপি সূত্রে খবর, চলতি মাসের ১৭ তারিখ বঙ্গ-সফরে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলায় এসে শাহের প্রথম নজর হতে চলেছে অনুব্রত মণ্ডলের জেলা বীরভূম। বিজেপির ওই সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে এমন বার্তা পাওয়ার পরেই তৎপর হয়েছেন রাজ্য এবং জেলা নেতৃত্ব। সোমবার শাহের বঙ্গ-সফরের জন্য প্রস্তুতি-বৈঠকেরও আয়োজন করা হয় সিউড়ির দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে হাজির ছিলেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, বীরভূমের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা এবং দুবরাজপুরের বিধায়ক অনুপ সাহা-সহ জেলার অন্য পদাধিকারীরা।
বৈঠক শেষে লকেট জানান, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটকে নজরে রেখে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বছরের শুরুতেই বাংলায় আসছেন অমিত শাহ। বীরভূমের তারাপীঠে গিয়ে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে বাংলায় সভা শুরু করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই সভা কোথায় হবে, কী ভাবে তার প্রস্তুতি নেওয়া হবে, সেই সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।’’ বীরভূম ছাড়াও লকেট যে জেলার সাংসদ, সেই হুগলির আরামবাগেও ওই সফরে একটি সভা করার কথা রয়েছে শাহের। লকেটই জানিয়েছেন সে কথা।
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব আগামী লোকসভা নির্বাচনে আরও বেশি আসন জিততে বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যে তাঁদের নজর বাংলা, ওড়িশা ও তেলঙ্গানার উপর। বাংলায় তাঁরা ২৪টি আসনের লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দিয়েছেন। এ কথা ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের মাধ্যমে বাংলার নেতাদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে কার্যত ‘দৈনিক যাতায়াত’ শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ বিজেপির কেন্দ্রের নেতারা। কিন্তু তার পরেও রাজ্যে প্রত্যাশিত ফল তো মেলেইনি, বরং ২০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটা দূরেই আটকে গিয়েছিল গেরুয়া শিবির। বিজেপি সূত্রে খবর, এ বার ফের লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলায় ৩৮টি সভা করতে পারেন মোদী-শাহ ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা। নতুন বছরের শুরুতে তারই সূচনা করতে চলেছেন শাহ।
দলীয় সূত্রের দাবি, সভাস্থল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে হেরে যাওয়া লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে। তার আগে সেই এলাকাগুলিতে সমীক্ষা চালিয়ে সাংগঠনিক সামর্থ্য বুঝে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে সেই কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে। সেই সমীক্ষার ফলের ভিত্তিতেই প্রথম সভা হিসাবে বীরভূমকে বেছে নেওয়া হয়েছে মনে করা হচ্ছে। যদিও বিজেপির একাংশের দাবি, গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত জেলবন্দি হওয়ার পর থেকেই আলাদা ভাবে বীরভূমের উপর নজর ছিল গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে সেই বার্তা পাওয়ার পরেই লালমাটিতে রাজ্য নেতাদের যাওয়া-আসাও বেড়ে গিয়েছে। সম্প্রতি অনুব্রতের জেলায় বেশ কয়েকটি সভাও করে গিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
সম্ভবত একই কারণে শাহের প্রথম সভার জন্য অনুব্রতের জেলাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে বলেই মনে করছেন জেলা নেতৃত্ব। বিজেপির এক জেলার নেতার কথায়, ‘‘এখন বীরভূমের মাটি ফাঁকা। জেলা তৃণমূলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। অনুব্রতের অনুপস্থিতিতে তা আরও প্রকট হচ্ছে এবং প্রকাশ্যেও আসছে। বীরভূমকে গেরুয়া করে তোলার এটাই বড় সুযোগ।’’ দলের এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘‘আসলে বীরভূমের ঘাঁটি নিয়ে সব সময়েই বড়াই করে তৃণমূল। সেই দর্প যদি চূর্ণ করা যায়, তা হলে গোটা তৃণমূল দলটারই মনোবল ভেঙে পড়তে পারে। এখন অনুব্রতও নেই। ফলে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না ঘাসফুল। যা আগামী লোকসভা নির্বাচনে আমাদের অনেক সাহায্য করবে।’’