ফাইল চিত্র।
কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় বাজেটে ১৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। যার অন্যতম, চাষ-আবাদের কাজে কর্পোরেট সংস্থার প্রবেশ। সেই লক্ষ্যে তিনটি মডেল আইন আগেই এনেছে কেন্দ্র। যার মূল কথা: চাষিদের জমি লিজে নিয়ে কৃষিতে বৃহৎ সংস্থার বিনিয়োগ টানা, কর্পোরেট সংস্থাগুলির সঙ্গে চাষিদের চুক্তিচাষের ব্যবস্থা করা এবং কৃষিপণ্য রফতানি ও বিপণনে বৃহৎ লগ্নি টেনে আনা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী রাজ্যগুলিকে এই সংস্কার কর্মসূচি চালানোর অনুরোধ করেছেন।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এখনই এই তিনটি আইন চালু করার কোনও ইচ্ছা সরকারের নেই বলে রাজ্যের কৃষি দফতর সূত্রে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় আইনে আপত্তি কেন?
এক) কৃষিকর্তাদের বক্তব্য, বঙ্গের বেশির ভাগই প্রান্তিক বা ক্ষুদ্র চাষি। তাই আইন করে কোনও কিছু চাপিয়ে দেওয়াটা খুব সমস্যার। এক কৃষিকর্তা বলেন, ‘‘এমনিতেই জমির উপরে প্রচুর চাপ রয়েছে। বেশির ভাগই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক হওয়ায় জমির ভাগও অনেক বেশি। তাই এই আইন পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে উপযুক্ত নয়। তবে কৃষকস্বার্থে যে-পদক্ষেপ করা দরকার, রাজ্য সরকার তা করেই থাকে।’’
দুই) এক জন বা কয়েক জন কৃষকের চুক্তিচাষে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকার সমর্থন করে না। রাজ্যের যুক্তি, কোনও কারণে চাষে লোকসান হলে তার প্রভাব সরাসরি সংশ্লিষ্ট কৃষক বা কৃষকদের উপরে এসে পড়বে। বিকল্প হিসেবে কৃষি উৎপাদকেরা সংগঠন তৈরি করে চুক্তিবদ্ধ হলে রাজ্য আপত্তি করবে না। ‘‘রাজ্য মন্ত্রিসভা তো ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি অনুমোদন করেছে। রাজ্য মনে করে, সমষ্টিগত ভাবে কৃষি উৎপাদকদের সংগঠন এই কাজ করলে তাতে কোনও এক জনের উপরে লোকসানের খাঁড়ার কোপ পড়বে না,’’ বলছেন এক কৃষিকর্তা।
তিন) কৃষিপণ্য বিপণনের যে-উদ্যোগ কেন্দ্র চাইছে, রাজ্য সরকার আগে থেকেই তা করে চলেছে। চাহিদা অনুযায়ী চাষে উৎসাহ দান থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে ফসল বাজারজাত করা পর্যন্ত সমস্ত রকম সহযোগিতা করে চলেছে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর। বিদেশে চাহিদা আছে, এমন ফসলের চাষ বাড়ানো হয়েছে উদ্যানপালন দফতরের মাধ্যমে। ফলে রফতানিও বাড়ছে। এক কৃষিকর্তার কথায়, ‘‘এই সব সিদ্ধান্ত কৃষকদের আয় বাড়াতে সাহায্য করেছে। বাংলা এই পথেই এগোবে। আমরা জানি, কী ভাবে কৃষকদের পাশে থাকতে হয়।’’
চাষিদের হাতে আরও অর্থ দিতে ১৫ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষুদ্র ঋণের কথা কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট-প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান যোজনায় যে-সব কৃষক চাষের খরচ বাবদ সরকারের ঘর থেকে টাকা পেয়েছেন, তাঁরাই এই ক্ষুদ্র ঋণের সুযোগ পাবেন।
রাজ্য সরকারের প্রশ্ন এখানেই। কৃষিকর্তারা জানান, পশ্চিমবঙ্গ পিএম কিসান প্রকল্পে যোগ দেয়নি। কৃষকবন্ধু নামে নিজেদের একটি প্রকল্প চালায় রাজ্য। তা হলে কৃষিঋণের টাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গ কি বঞ্চিত হবে? নবান্নের কেউ কেউ জানিয়েছেন, যদি কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এই টাকা বিলি হয়, তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু পিএম কিসান প্রকল্পের উপভোক্তারাই যদি ঋণের টাকা পান, তা হলে সমস্যায় পড়বে রাজ্য।