ছবি সংগৃহীত।
নয়া শিক্ষানীতিতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই নীতির পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্যে ব্যবসার ক্ষেত্রে আশার আলো দেখছেন বিভিন্ন বেসরকারি প্রাক-প্রাথমিক বা প্রি-স্কুলের কর্ণধারেরা। তাঁরা বলছেন, আপাতত বেসরকারি প্রাক-প্রাথমিক বা প্রি-স্কুল মূলত শহর এবং শহরতলিতে সীমাবদ্ধ। কিন্তু বাজারে চাহিদার শর্ত মেনে আগামী দিনে এই ধরনের স্কুলের আরও বিস্তার ঘটতে পারে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের আশাও করছেন অনেকে। দেশ জুড়ে ২০১৬ থেকে বার্ষিক ৩০ শতাংশ হারে বাড়তে থাকা প্রি-স্কুলের ব্যবসা নয়া নীতির দৌলতে এক লাফে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির মুখ দেখবে বলেও মনে করছে বণিকমহল।
বণিকসভা অ্যাসোচামের প্রি-স্কুল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং একটি প্রি-স্কুল গোষ্ঠীর সিইও তমাল মুখোপাধ্যায় জানান, এ রাজ্যে মূলত শহর ও আধা-শহর এলাকাতেই বেসরকারি প্রি-স্কুল সীমাবদ্ধ। সামগ্রিক ভাবে সেটি বড়জোর ৪০ শতাংশ হবে। এই রাজ্যে বেসরকারি স্কুলের বেশিরভাগই অসংগঠিত, অর্থাৎ বিভিন্ন পাড়ায়-পাড়ায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি হওয়া স্কুল। বাকি ২০ শতাংশ সংগঠিত ভাবে বৃহৎ উদ্যোগে তৈরি হওয়া স্কুল। তমালবাবু মনে করেন, ‘‘প্রি-স্কুল বাধ্যতামূলক হওয়ায় অনেক অভিভাবক উন্নত মানের শিক্ষা ব্যবস্থা খুঁজবেন। তার ফলে প্রি-স্কুলের ক্ষেত্রেও ব্র্যান্ড ভ্যালু কাজ করবে। তার ফলে বড় স্কুলগুলিও শহর থেকে দূরে শাখা খুলতে উদ্যোগী হবে।’’
অনেকেই মনে করছেন, নতুন শিক্ষা নীতিতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ব্য়বস্থাকে একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তার ফলে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণি বৈষম্যের শিকার হবে। তবে এর পাল্টা যুক্তিও শোনা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, অঙ্গনওয়াড়ি তুলে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তব চিত্র হল, একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকা বাদ দিলে সিঙ্গুর, ধূপগুড়ির মতো এলাকাতেও এই ধরনের বেসরকারি স্কুল রয়েছে। সেখানে প্রচুর পড়ুয়া ভর্তিও হচ্ছে। এই গোটা ব্যবস্থাকে একটি কাঠামোর ভিতরে আনলে তাতে লাভ হবে।
আরও পড়ুন: সময় লাগবে নীতি রূপায়ণে, ধন্দ মাধ্যমিকের ভবিষ্যৎ ঘিরেই
এই প্রসঙ্গে অনেকে বলছেন, বহু পাড়ার প্রি-স্কুলে যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়াই শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়াচ্ছেন। নতুন নীতির ক্ষেত্রে সেগুলিও গুরুত্ব পাবে। তবে এই ব্যবসায়িক উদ্যোগের ক্ষেত্রে বেসরকারি স্কুলগুলি ফি না-কমালে বৃহত্তর নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির চাহিদা মেটাতে পারবে না বলেই মনে করছেন অনেকে। একইসঙ্গে অনেকে মনে করছেন, যদি তিন বছর প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে পড়াশোনা বাধ্যতামূলক হয় তা হলে স্কুলগুলির আয় বাড়বে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতনও বাড়বে। শুধু তাই নয়, এই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়তে পারে। তাতে অর্থনৈতিক উন্নতির সুযোগও থাকছে।
আরও পড়ুন: শিক্ষায় সঙ্ঘ-ধ্বনি, নিয়ন্ত্রক সংস্থাতেও কি আরএসএস