ফাইল চিত্র।
বাবুল সুপ্রিয়ের সাংসদ-পদে ইস্তফা আটকাতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মরিয়া। বাবুল শনিবার ফেসবুকে রাজনীতি এবং সাংসদ পদ ছাড়ার ঘোষণা করেছেন। তার পরে শনিবার রাতেই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডার ডাকে দলের সদর দফতরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বাবুল। সূত্রের খবর, তিনি নড্ডাকে দল সম্পর্কে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও বাবুলের কথা হয়ে থাকতে পারে।
বিজেপি সূত্রের খবর, বাবুল যাতে সাংসদ পদ না ছাড়েন, দলের শীর্ষ মহল সে ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছে। মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ায় নিজের ক্ষোভের কথা আগেই ফেসবুকে জানিয়েছিলেন বাবুল। দলীয় সূত্রের দাবি, নড্ডাকেও শনিবার রাতে সে কথা ফের বলেছেন তিনি। বিজেপিকে ‘বাঙালি বিরোধী’ দল বলে প্রচার করে বিরোধীরা। সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভা থেকে তাঁর অপসারণের সূত্রে বাবুল এই বিষয়টিকেও যুক্ত করেছেন।
বিজেপির অন্য এক সূত্রে বলা হচ্ছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে বাবুলকে বলা হয়েছে, অভিযোগ জানানোর জন্য দলের ভিতরে নির্দিষ্ট মঞ্চ রয়েছে। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তা জানানো কার্যত দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের সমান। পাশাপাশি, তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, গত ৭ বছর তিনি টানা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। প্রথম বার লোকসভায় জিতে আসার পরই তাঁকে মন্ত্রী করা হয়েছিল। কিন্তু দল ক্ষমতায় থাকলেই কাউকে চিরতরে মন্ত্রী করে রাখা হবে, তা হতে পারে না। আর মন্ত্রী না থাকলেই রাজনীতিতে সব শেষ হয়ে যায় না। তাঁকে সাংগঠনিক গুরুদায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। রবিশঙ্কর প্রসাদ বা প্রকাশ জাভড়েকরকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর উদাহরণও বাবুলকে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের দাবি।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বাবুল সাংসদ পদে ইস্তফা দিলে তাঁর কেন্দ্র আসানসোলে উপনির্বাচন হবে এবং তাতে বিজেপির জিতে আসা রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্কে খুব সহজ নয়। সেই কারণেই বিজেপি নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত বাবুলকে সাংসদ হিসাবে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারেন। বাবুলের দিক থেকে অবশ্য এ দিন পর্যন্ত এ সব নিয়ে নতুন কোনও ভাবনার ইঙ্গিত মেলেনি।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য মানতে চাইছেন না, বাবুল রাজনীতি এবং সাংসদ পদ ছাড়ছেন। তিনি শনিবার বলেছিলেন, ‘‘উনি কি ইস্তফা দিয়েছেন?’’ তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র কুণাল ঘোষও ‘বাবুল নাটক করছেন’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন শনিবার। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনও এ দিন বলেন, ‘‘উনি আদৌ পদত্যাগ করেননি!’’
রবিবার ভোরে বাবুল ফের একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘একটু সময় দিন না আমাকে।’’ ওই পোস্টে তাঁর মূল বক্তব্য, তাঁকে অন্তত এখন ‘অশোভন’ মন্তব্যের মোকাবিলা করতে হবে না। তিনি অনেক ‘সৎ কাজে’ সময় ব্যয় করতে পারবেন।
অন্য দিকে, রাজ্যের মন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটকের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আগেই ঘোষণা করেছিলেন, আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কার্যালয়ের তালা খোলার লোক থাকবে না!’’